রাজশাহীতে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সাবেক ছাত্রলীগ (Chhatra League) নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। ছবির ব্যক্তিটি মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক ইয়াসির আরাফাত আপন। তাকে একটি জনশূন্য রাস্তায় কালো পাঞ্জাবি পরে, মুখে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে, হাতে একটি পিস্তল নিয়ে সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল গত বছরের ৫ আগস্টের আগে, যখন রাজশাহীতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডারদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সেই হামলায় ছাত্র-জনতার পক্ষে অন্তত দুইজন নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন, যাদের অনেকেই এখন শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ইয়াসির আরাফাত আপন ওই হামলার সময় অস্ত্রসহ উপস্থিত ছিলেন এবং সরাসরি গুলিবর্ষণ করেন।
আপন ছিলেন ২০২২ সালের ১১ মার্চ অনুমোদিত রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির নেতা, এবং তৎকালীন সভাপতি রকি কুমার ঘোষের সবচেয়ে আস্থাভাজন অস্ত্রধারী ক্যাডার। পরবর্তী কমিটির সভাপতি নূর মো. সিয়াম এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। রাজশাহীতে ইয়াবা ব্যবসার ডিলার হিসেবেও আপনের পরিচিতি রয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে এবং অনেকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এই বাহিনীর সদস্যরা রাজশাহীর রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাপট দেখায়।
আলোচিত এই ক্যাডার ২০২২ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতার দাপটে রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন (সড়কপথ) ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেন। তার এই পদে নির্বাচিত হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন তার বাবা শাহ আলম, যিনি আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত এবং দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (AHM Khairuzzaman Liton)-এর ঘনিষ্ঠ। ওই নির্বাচনের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন শাহ আলম।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও আপনের প্রভাব কমেনি। এখনো তিনি প্রকাশ্যে রয়েছেন, অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “আপন ও তার বাহিনীর আতঙ্কে আছি। অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।”
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা খোঁজ নেব। এরকম ঘটনা ঘটলে অবশ্যই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এই অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডারের ছবি ভাইরালের বিষয়টি এমন এক সময় সামনে এসেছে, যখন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও অস্থির। ড. ইউনুস (Dr Muhammad Yunus)-এর নেতৃত্বে নির্বাচন বানচাল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ (Awami League) এবং ভারত। সেই লক্ষ্যেই প্রতিদিন রাজপথে মিছিল করছে আওয়ামী লীগ, যদিও তাদের দলীয় কার্যক্রম এখন কার্যত নিষিদ্ধ।
ঠিক এমন এক সময়, জামায়াতে ইসলামীও রাস্তায় বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। এই হঠাৎ সক্রিয়তা এবং সংগঠিত কর্মসূচি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁদের প্রশ্ন—জামায়াতও কি তবে কারো ইন্ধনে নির্বাচন বানচালের পথেই হাঁটছে?
রাজশাহীর ভাইরাল হওয়া একটি ছবি তাই কেবল একজন ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয় নয়; এটি ঘিরে প্রশ্ন উঠছে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট, নির্বাচনের বৈধতা ও ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়েও।