ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী (Mujibur Rahman Nixon Chowdhury)-এর উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ও ফোকাল পয়েন্ট (মিডিয়া) এ তথ্য দেন।
পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের গেজেট প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে। ওই গেজেট অনুযায়ী ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ থেকে পৃথক হয়ে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর প্রতিবাদে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভাঙ্গা উপজেলার ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল ও ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কে স্থানীয়রা অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এই আন্দোলনকে ঘিরে নিক্সন চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক উসকানিমূলক বক্তব্য দেন বলে দাবি পুলিশের। এতে ভাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় নিক্সন আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দিতে আহ্বান জানান এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (Bangladesh Election Commission)-কে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি তার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাঘাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, নিক্সনের ওই ভিডিও বার্তা তার অনুসারীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করে, যা সাধারণ মানুষকেও আন্দোলনে সহিংস হতে প্ররোচিত করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গায় নিক্সনের অনুসারীরা সাধারণ মানুষের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে থানা, হাইওয়ে থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নির্বাচন অফিস ও কৃষি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এমনকি সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, যার ফলে সরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর নিক্সন চৌধুরী ফের এক ভিডিও বার্তায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবৈধ আখ্যা দেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদগার করেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। এতে জনগণকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা ছিল বলে পুলিশ মনে করছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সহিংস আন্দোলনের ইঙ্গিত দেয়।
জেলা পুলিশ জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, কোনো উসকানিমূলক বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে আইন মেনে চলতে এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহযোগিতা করতে। পুলিশের আশ্বাস, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি উসকানিমূলক বক্তব্য বা গুজব প্রচার করে, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জানানোর অনুরোধও জানানো হয়।
এদিকে, ভাঙ্গা থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে নাম উল্লেখ করে মোট ২৯ জনকে আসামি করা হয় এবং আরও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলার ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সর্বদলীয় আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান খোকন মিয়াকে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই হামলা ও ভাঙচুরে ৪০ লাখ টাকার সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।