যে কোনো পরিস্থিতিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, জোটের রাজনীতিতে বড় পালাবদলের আভাস

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন থাকলেও, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া বা বানচালের কোনো চেষ্টা সফল হবে না—এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, অচিরেই বদলে যেতে পারে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ।

ফেব্রুয়ারিতে ভোট নির্ধারিত হলেও সাধারণ মানুষের মনে এখনও সংশয় রয়ে গেছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কিছু মহল নির্বাচন ঠেকাতে বা বিলম্বিত করতে চাইছে। এমনকি খোদ প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও প্রকাশ্যে বলেছেন, নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টা রয়েছে। তবে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কোনো চাপে পড়ে নয়—নির্বাচন ঠিক সময়েই হবে।

রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, ডিসেম্বরের আগেই পরিবর্তন আসবে রাজনীতির অন্দরে। এখন যারা পিআর ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের একটি অংশ তফসিল ঘোষণার আগে পুরোনো সরাসরি ভোটব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে প্রধান শক্তি বিএনপি (BNP) কোনো না কোনো আকারে জোট গঠনে যেতে পারে। বর্তমানে বিএনপি ইসলামি বিভিন্ন দলের তৎপরতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

রাজনীতির আলোচনায় নতুন করে উঠে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি (NCP)। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর জন্ম নেওয়া এ দলকে ঘিরে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এত দিন ডানপন্থি কোনো শক্তির সঙ্গে তাদের সমঝোতার ধারণা থাকলেও, এখন নতুন কৌশল নিতে পারে এনসিপি। কার সঙ্গে জোট করলে কত আসন পাওয়া যাবে এবং দলের স্বার্থ কতটা রক্ষা পাবে—তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ।

এদিকে ছোট দলগুলোকে টানার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বড় দলগুলো। আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময়কার সঙ্গীদের বিএনপি ধরে রাখলেও, একদিকে জামায়াতে ইসলামী নতুন ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বাম ও মধ্যপন্থি কয়েকটি দল আলাদা তৃতীয় জোট তৈরির উদ্যোগে নেমেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে গোপন আলোচনা চলছে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এনসিপি নাম পরিবর্তনে আগ্রহী নয়।

অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সাতটি দলকে নিয়ে অভিন্ন কর্মসূচি করছে। তারা একক প্রার্থী দিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার চিন্তা করছে, যদিও আনুষ্ঠানিক জোট নয়। বিএনপিও এই প্রক্রিয়ার বিপরীতে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক এবং চট্টগ্রামের বাবুনগর মাদ্রাসায় সাক্ষাৎ করেছে বিএনপির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীও বলেছেন, হেফাজতের সঙ্গে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হতে পারে।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস যুগপৎ কর্মসূচি চালাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, তারা জোট করবে না, তবে নির্বাচনে একক প্রার্থী দিয়ে সমঝোতার পথে যেতে পারে।

অন্যদিকে রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেছে নয়টি রাজনৈতিক দল, যাদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল, এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং গণঅধিকার পরিষদ রয়েছে। নতুন জোট গঠনের লক্ষ্যে তিন ঘণ্টার বৈঠক হলেও এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের মতে, ভবিষ্যতে আরও কিছু দল এই উদ্যোগে যোগ দিতে পারে।

সব মিলিয়ে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ, জোট ভাঙা-গড়ার খেলা এবং কৌশলগত পালাবদল ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সামনে কীভাবে গড়ে উঠবে জোটের ছবি, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *