আসন ছাড় আর জোট গঠনে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি

বিগত সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এবার ভিন্ন কৌশল নিয়েছে বিএনপি (BNP)। দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের জন্য নির্দিষ্ট আসন ছাড়ার। এ জন্য ইতোমধ্যেই মিত্র সংগঠনগুলোর কাছে আসনের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনি জোট গঠনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা শুরু করতেও প্রস্তুত হচ্ছে দলটি।

মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টা ১০ মিনিটে। চেয়ারপারসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) (ভার্চুয়ালি), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

সূত্র জানায়, শিগগিরই বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রদের সঙ্গে বসে আসন ছাড়, প্রার্থী বাছাই এবং জোটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবে। কারা কোন আসনে জনপ্রিয়, কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অবস্থান কেমন—সবই বিবেচনায় রাখা হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির প্রার্থীদেরও মিত্র প্রার্থীদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের ভিন্নভাবে মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দেবে বিএনপি। আবার অনেকে বয়সজনিত কারণে সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নন, তাদেরও অন্যভাবে সম্মানিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বৈঠকের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি সাক্ষাৎকার ঘিরে বিতর্ক। সূত্র জানায়, বৈঠকে তারেক রহমান নিজেই এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। মির্জা ফখরুলও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রকাশিত বক্তব্যে ‘টুইস্ট’ করার অভিযোগ তোলেন। পরে তারেক রহমান গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার বিষয়েও নিজের মন্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সততার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আসে। সূত্র জানায়, জামায়াত মুখে বলছে তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। অথচ দলটি ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং আগেভাগেই নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য মনে করেন, জামায়াত কট্টর ডানপন্থি হলেও বিএনপির অবস্থান উদার গণতান্ত্রিক। তাই তাদের প্রতিটি আসনে প্রার্থী দাঁড়ালেও বড় কোনো সমস্যা হবে না, কারণ জামায়াতের তেমন জনপ্রিয় প্রার্থী নেই। বিপরীতে বিএনপির প্রতিটি আসনে তিন-চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা জনপ্রিয়ও। ফলে তফসিল ঘোষণার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করলে দলের ভেতরে বিভেদ ও গ্রুপিং বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কেউ কেউ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *