জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে নিউ ইয়র্ক সফরে গিয়ে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং কেবল তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ইউনূস অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি দেখছেন ভারত কার্যত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)-র কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন যে হাসিনা ভারতের মাটি থেকে বাংলাদেশবিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন।
হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার নেপথ্যে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে ইউনূসের মন্তব্য ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “ভারত বরাবরই তাঁকে সমর্থন করেছে। যাঁরা তাঁর পিছনে আছেন, তাঁরা এখনও বিশ্বাস করেন যে হাসিনা বিজয়ীর বেশে আবার বাংলাদেশে ফিরবেন।”
সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত আদৌ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, “ভারত যদি পুরোপুরি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে তারা তাঁকে রেখে দেবে। কিন্তু যদি আইনি জটিলতা থাকে, তখন ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হবে।” যদিও সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তিনি তোলেননি। তবে ইঙ্গিত দেন, “বাইরের কিছু শক্তি তাঁকে বাংলাদেশে ফিরতে সহায়তা করতে পারে, এ আশঙ্কা সবসময় আছে।”
মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনার প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন ইউনূস। তিনি জানান, মোদীকে দুটি অনুরোধ করেছিলেন। প্রথমত, ভারত চাইলে হাসিনাকে রাখতে পারে, তবে যেন তিনি বাংলাদেশের বিষয়ে মন্তব্য না করেন। দ্বিতীয়ত, যেন বাংলাদেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে কোনো প্রচারণা না চালান। কিন্তু মোদীর কাছ থেকে তিনি আশানুরূপ জবাব পাননি। মোদীর প্রতিক্রিয়া ছিল, “আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জনবিক্ষোভের চাপে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। সেদিনই বোন রেহানাকে নিয়ে তিনি বিমানে চেপে ঢাকা থেকে উত্তরপ্রদেশের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে চলে আসেন। সেই থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত সামাজিক মাধ্যমে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এ নিয়েই একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউনূস। সম্প্রতি পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি সতর্ক করেছিলেন যে ভারতের মাটি থেকে হাসিনার এমন বিবৃতি নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
নিউ ইয়র্ক সাক্ষাৎকারে ইউনূস আবারও পুনরাবৃত্তি করেন, আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি, কেবল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
(সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা)