আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আইন, বিচার ও সংসদ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল (Asif Nazrul)।
বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরীর শংকর মঠের দুর্গা পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা
সাংবাদিকদের প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, “উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেটা বলেছেন সেটা আসলে তাত্ত্বিক বিষয়। থিউরিটিক্যালি যখন কোনো দলের কার্যক্রম ব্যান হয়, তখন সেটা স্থায়ী কি না—সে প্রশ্ন থেকে যায়। কিন্তু বাস্তবতার জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না।”
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (International Criminal Court) বাংলাদেশের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠন হিসেবে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও পূজা পরিবেশ
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেয়ার আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম—আমাদের দৃষ্টিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা মনে করি প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালন ও ধর্মচর্চার সমান অধিকার রয়েছে। তাই সারাদেশে নিরাপদ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”
তিনি জানান, পূজা চলাকালে নানা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা থাকলেও সরকার প্রথম থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল। বরিশাল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচন ও দায়িত্বশীলতার প্রতিশ্রুতি
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হওয়ার পর এক সেকেন্ড বা এক ঘণ্টাও ক্ষমতায় থাকার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা শুধু চাই, নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান কিছু সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পন্ন হোক। কারণ এ আন্দোলনে অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের আগেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল জনগণ দেখতে পাবে।
সংস্কার কার্যক্রমের চিত্র
আইন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল জানান, এখন পর্যন্ত ৯ থেকে ১০টি বড় ধরনের সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্রথমবারের মতো সিভিল ও ক্রিমিনাল কোর্টকে আলাদা করা, লিগ্যাল এইড সার্ভিস সম্প্রসারণ, ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) ও দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি) সংশোধন, অনলাইন বেলবন্ডার চালু করা।
তিনি বলেন, “এখন থেকে ক্রিমিনাল কোর্ট শুধু বিচারই করবে। বিচারিক পদ সৃষ্টি করার ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে না; এটি করবে সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতি। আদালতের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে যে দুর্নীতি চলত, সেটিও বন্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে এ দায়িত্ব পালন করবে বিচার প্রশাসন।”
ঐক্যমত কমিশন ও সাংবিধানিক প্রশ্ন
ঐক্যমত কমিশনের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে অনেকে মনে করছেন কাজ থেমে গেছে। আসলে তা নয়। কমিশন যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে, সেখানে সংবিধান সংশোধনের প্রশ্ন জড়িত। আর রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা ছাড়া সাংবিধানিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে সাধারণ অধ্যাদেশ ও সরকারি আদেশের মাধ্যমে যে সংস্কারগুলো করা সম্ভব, সেগুলো আমরা অনেকটাই শেষ করেছি। ফেব্রুয়ারির আগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে।”
পাহাড়ি অঞ্চলের সংবেদনশীলতা
পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “পাহাড়ের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমি যতটুকু জানি, আমাদের সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি অনুসরণ করছে। পাহাড়ি-বাঙালি, হিন্দু-খ্রিষ্টান-মুসলমান—সবাই সমানভাবে বাংলাদেশি নাগরিক। শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে নিরাপদে বসবাসের অধিকার সবার আছে। কেউ যদি এই সমঅধিকারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
তিনি আশ্বাস দেন, “আমরা চাই সকলে মিলে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে দেশ গড়ে তুলতে।”