জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

সংবিধান–সংক্রান্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের আলোকে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদ (July National Charter) বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের সরাসরি আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)। রবিবার সকাল পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Ali Riaz), সদস্য বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar) এবং অন্যান্য সদস্যরা। আজকের আলোচনায় মূল উদ্দেশ্য ছিল—জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কতটা কমেছে তা মূল্যায়ন করা।

কমিশন জানিয়েছে, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের প্রণীত পরিমার্জিত ও নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো প্রস্তাব আকারে তুলে ধরতে পারবে, যাতে সনদের বাস্তবায়নপদ্ধতি চূড়ান্ত করা যায়। যদিও সনদের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত, তবুও এর বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে এখনো পূর্ণ ঐকমত্য হয়নি, যা চূড়ান্ত সনদ প্রকাশে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতেই সনদ বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে তৃতীয় ধাপের তৃতীয় দিনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ সংলাপের ধারাবাহিকতায় আজকের বৈঠক।

কমিশনের পক্ষ থেকে দুইটি বিকল্প পদ্ধতির প্রস্তাব সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। প্রথমটি হলো—সংবিধান আদেশ জারি, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)-এর অভিমত গ্রহণ এবং প্রয়োজন হলে গণভোট আয়োজন। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গঠিত হবে একটি গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা, যার মাধ্যমে নির্বাচিত এমপিদের হাতেই থাকবে সাংবিধানিক ইস্যুগুলোর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি।

এদিকে বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐক্য না হওয়ায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যকাল ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের আলোচনা (২০ মার্চ–১৯ মে) চলাকালে ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। প্রথম পর্বে ৬২টি বিষয়ে এবং পরবর্তী পর্বে ২০টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দলগুলো। এখন পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোট লিখিতভাবে তাদের মতামত পাঠিয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণও দিয়েছে।

সুতরাং, সনদের মূল কাঠামো একরকম তৈরি হলেও বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা চলছে পুরোদমে। সময় গড়াচ্ছে, তবে আশা জাগাচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের ব্যবধান কিছুটা হলেও কমেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *