ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। বরং তার মতে, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো—বিভিন্ন কৌশল, আইন-কানুন ও অজুহাতের মাধ্যমে নির্বাচনের সময় বিলম্বিত করার চেষ্টা, একই ইস্যুতে রাজনৈতিক আলোচনা ও রাস্তায় আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করা, অথবা পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে একটি অস্থিতিশীল সরকারব্যবস্থা তৈরি করার প্রচেষ্টা।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘আগামী নির্বাচন গুণমানসম্পন্ন ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। সভার আয়োজন করে নাগরিক যুব ঐক্য।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “এখনো কেউ কেউ আগে গণভোট বা সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছে। এগুলো পরিহার করা উচিত। এগুলোই মূল চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন নয়।” তিনি মনে করেন, সরকার চাইলে অধ্যাদেশ জারি করে কিংবা আরপিও (RPO) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) কে গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা দিতে পারে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে একই আয়োজন, একই ব্যয় ও একই লজিস্টিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোটারদের সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য পৃথক গণভোট আয়োজনের বিষয়টিকে অযৌক্তিক ও বিলম্বসৃষ্টিকারী হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি আয়োজন করতে গেলে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের মতো বিশাল প্রস্তুতি নিতে হবে, যা নির্বাচন বিলম্বিত করার অজুহাত হিসেবেও ব্যবহার হতে পারে। একই দিনে দুটি ব্যালট থাকলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে—এই ধারণাকেও খণ্ডন করেন তিনি। তার বক্তব্য, দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই স্থানীয় সরকার, উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একাধিক ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত।
পুলিশের মনোবল আগের অবস্থায় না ফেরায় তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না—এ প্রশ্ন এখনো জনমনে রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে তিনি আশাবাদী যে, এবার এক লাখ সেনাসদস্য নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবেন। আনসারসহ সহযোগী বাহিনীগুলোও প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। তার মতে, এবার জনগণ নিজেরাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অতন্দ্র ভূমিকা পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা হবে গৌণ, কারণ জনগণ নিজেরাই অনিয়ম প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে।
রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না থাকলে পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জোট গঠনের প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “রাজনৈতিক জোট হোক বা না হোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ঠেকাতে পতিত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এখনো সক্রিয়। তবে তাদের এখন পর্যন্ত কিছু বিচ্ছিন্ন ঝটিকা মিছিল ছাড়া কোনো বড় সফলতা নেই। “ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের শক্তির আর কোনো উৎপত্তি ঘটবে না,” বলেন তিনি।
জামায়াতের রাজনীতি নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার চর্চা বিএনপি কখনো মেনে নেবে না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক যুব ঐক্যের প্রধান সমন্বয়কারী মাহফুজুল ইসলাম খান এবং সঞ্চালনা করেন ফারুক হোসেন খান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম (Hasnat Kayyum), ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রমুখ।