রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে মতভিন্নতার পর নতুন আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় মতভিন্নতা দেখা দেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হওয়া এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)।

এর আগে বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আসন্ন জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Ali Riaz), সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়াও বৈঠকে অংশ নেন।

আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মতভিন্নতা দেখা দিলেও, ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকবেই, কিন্তু ঐকমত্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা সম্ভব।” ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই তিনি এই মন্তব্য করেন। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও।

আলী রীয়াজ জানান, “সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিফলন হিসেবেই আমরা আগামী শুক্রবার জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারব। প্রতিটি দলের প্রতিনিধি যাতে স্বল্প সময়ে স্বাক্ষর করতে পারেন, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “গতকাল কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল—কিছু তথ্য এদিক-সেদিক গিয়েছিল। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা আশাবাদী, আনন্দমুখর পরিবেশে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে।”

আলী রীয়াজ ব্যাখ্যা করেন, “সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশনামা তৈরি করেছিল। রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, যা জুলাই সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে—কেন এবং কোন বিষয়ে মতভিন্নতা তা-ও সেখানে ব্যাখ্যা করা হবে।”

তিনি জানান, এই সনদ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দলিল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে, যাতে যে কেউ দেখতে পারবেন কোন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত ছিল, কোথায় মতভিন্নতা ছিল, এবং সেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের অগ্রগতি কেমন হয়েছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কেবল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা যেন প্রত্যেক নাগরিকের কাছে পৌঁছে যায়—এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের যে ধারা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মতভিন্নতা থাকলেও রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে ঐক্যের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ সম্ভব।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *