বাকি মাত্র চার মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অযোগ্য উপদেষ্টাদের কাছ থেকে বড় কিছু পাবার আশা নেই: রাশেদ খান

রাশেদ খান (Rashed Khan), গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, বলেছেন যে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পুরোপুরি যোগ্যতা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নেই। তিনি বলেন, আগামী চার মাসে তাদের কাছ থেকে বেশি প্রত্যাশাও রাখা ঠিক হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে রাশেদ খান এসব মন্তব্য করেন এবং গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

অপ্রাপ্ত প্রতিশ্রুতি ও হতাশা:
রাশেদ খান লিখেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ছিল তারা অফিস-আদালতে দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অভিযান চালাবে; দুর্নীতিবাজ আমলারাদের ধরে ধরে জেলা ঢোকাবে এবং ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ ডামি রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রীদের কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ঢোকাবে। জনগণ প্রত্যাশা করেছিল তারা অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নেবে। কিন্তু বাস্তবে এসবের বিপরীতে উপদেষ্টাদের কাছে অধিকাংশকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছে এবং পুনর্বাসন করা হয়েছে—এমনটাই রাশেদ খানের অভিযোগ।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সমাজ থেকে অনাচার ও অবিচার রোধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার কথা ছিল। শহর, হাটবাজার, গ্রামগঞ্জে মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতা, চোর-ডাকাত, চাঁদাবাজ, মাস্তান, কিশোর গ্যাং, নারী নিপীড়ক, ধর্ষক ও জবরদখলদারদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে—তবে এসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা:
রাশেদ খান স্মরণ করিয়ে দেন যে সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ও জনগণকে উৎসাহিত করতে প্রতি ৩ মাসে বা ৬ মাসে উপদেষ্টা ও আমলাদের সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে বা জনসম্মুখে প্রকাশ করবে এবং ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদেরও সম্পদের হিসাব দেবার বাধ্যবাধকতা আরোপ করবে—এমন প্রতিশ্রুতি ছিল। এছাড়া প্রদত্ত হিসাব থেকে দুদক (Anti-Corruption Commission) কর্তৃক প্রাপ্ত হিসাবের হেরফের হলে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছিল। তবুও রাশেদ খান বলেন, কথার ফুলঝুরির বাইরে এগুলো কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

শিক্ষা–স্বাস্থ্য অবস্থা:
তিনি সতর্কভাবে আলোকপাত করেন যে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের দুর্দশা আগের মতোই রয়ে গেছে। এই দুই খাতই ছিল সবচেয়ে জরুরি মনোযোগের দাবি রাখে; তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাদ দিয়ে অগুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি জোর দেওয়াকে তিনি নিন্দনীয় বলেই মনে করেন।

নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ:
রাশেদ খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় মোটামুটি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের বাকি চার মাসে তাই তিনি খুব বেশি প্রত্যাশা রাখেন না—জনগণের প্রত্যাশা পূরণে উপদেষ্টাদের পুরো যোগ্যতা নেই। যতটুকু করেছে, সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে জনগণকে, তিনি যোগ করেন।

অবশেষে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সতর্ক করে বলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের পরও রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন না হলে তা ভবিষ্যৎ গণ-অভ্যুত্থানের সুযোগ রেখে দেয়। আবার গড়ার বদলে ভাঙার সুযোগ রেখে দেওয়ার দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কখনো এড়াতে পারবে না—তাই তাদেরকে ইতিহাসের সামনে দাঁড়াতে হবে, দাবি করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *