“নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধক্ষেত্র, আর সেখানে জয়ী হতে চাই নিরপেক্ষ ও সাহসী যোদ্ধা”—এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রশাসনিক রদবদলের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তিনি বলেন, ভোটকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ রাখতে হলে প্রশাসনের রদবদল তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং শুধুমাত্র যোগ্য কর্মকর্তাদেরই নির্বাচনী দায়িত্বে আনা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও রদবদলের যাবতীয় কাজ তার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য তৈরি ‘ফিট লিস্ট’ থেকে বাছাইকৃত ব্যক্তিদের ভোটের আগে স্থানান্তর করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি নেতারা স্পষ্টভাবে দাবি জানান, অতীতের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সময় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের—আসন্ন নির্বাচনে সম্পৃক্ত না করার। তারা প্রশাসনে রদবদলের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর জোর দেন এবং বলেন, কোনো রাজনৈতিক প্রভাব যাতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir), স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) ও সালাহউদ্দিন আহমদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বৈঠক-পরবর্তী এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আসন্ন নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে পরিচালিত করতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, সচিবালয়ে এখনও ‘ফ্যাসিস্টদের দোসররা’ সক্রিয় আছে, যাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ লোকদের দায়িত্বে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “বিচার বিভাগ ও জেলা প্রশাসনেও দলীয় প্রভাব রয়েছে—এগুলো দূর করতে হবে। পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি এমন ব্যক্তিদেরই দিতে হবে যারা কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের বাহক নন। এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারকেও নিজেদের ভেতরে থাকা দলীয় লোকদের সরিয়ে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।”
এই বৈঠক ও বক্তব্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, রদবদল এবং নির্বাচনী দায়িত্ব বণ্টন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ ও বিএনপির গভীর উদ্বেগ। প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে আপাত স্বস্তি পেলেও মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষতার বাস্তব প্রয়োগই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।