নিখোঁজের একদিন পর গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার টিএনটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী (Mufti Mohibullah Miaji)-কে পঞ্চগড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হ্যালিপ্যাড এলাকার সড়কের পাশে একটি গাছে শিকল দিয়ে পা বাঁধা ও বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল-এ ভর্তি করে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির পথে থাকলেও এখনো তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, যদিও কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে মুফতি মহিবুল্লাহ জানান, বুধবার ফজরের নামাজ শেষে হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এসে তার মুখে কাপড় চেপে ধরে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, “যারা আমাকে অপহরণ করেছে, তাদের মুসলমান বা হিন্দু মনে হয়নি। বাংলাদেশিও মনে হয়নি। তারা প্রমিত, শুদ্ধ বাংলায় গালাগাল করছিল।”
তিনি আরও জানান, তাকে ইসকন (ISKCON)-এর চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর জামিনের প্রসঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছিল। কয়েক মাস ধরেই চিঠির মাধ্যমে তাকে ইসকনের বিরুদ্ধে বক্তব্য না দিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি ইসকনের পক্ষে কথা বললে এক কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২১ অক্টোবর তারিখে পাঠানো এক চিঠিতে এনসিপি ও বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলতে নিষেধ করা হয় এবং নির্দেশ অমান্য করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে আরও উল্লেখ ছিল—‘বাংলাদেশ’ নয়, ‘পূর্ব বঙ্গ’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে এবং অখণ্ড ভারতের পক্ষে কথা বলতে হবে।
মুফতি মহিবুল্লাহ বলেন, “আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই এবং আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে, খবর পেয়ে পঞ্চগড়সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য আলেম-ওলামা তাকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন। ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় ইসলামী সংগঠনের নেতারা আজ দুপুরে পঞ্চগড় শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান (Dr. Mizanur Rahman) জানান, “বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর আগে তার একটি জটিল অপারেশন সম্পন্ন হয়েছিল। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিসের রোগী, তাই তাকে বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছে।”
জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি (Mizanur Rahman Munshi) বলেন, “আমরা খবর পেয়ে ভোরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে ভর্তি করাই। টঙ্গী থানা ও তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কে বা কারা অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তা তদন্তের বিষয়।”