নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি (BNP)। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed) জানিয়েছেন, এই খসড়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশন (Election Commission)-এর কাছে চিঠি দেবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে খসড়া উত্থাপন করা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচনসংক্রান্ত এই খসড়া অনুমোদন দেয়। এতে বলা হয়, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ জোটের প্রার্থী হলেও ‘জোটের অভিন্ন প্রতীক’ ব্যবহার করা যাবে না।
সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, এই বিধান ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, “এটাতে ছোট দলগুলোরও সম্মতি নেই, আমাদেরও নেই। এটা কেন একতরফাভাবে উত্থাপন করা হলো, আমরা জানি না। খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছিল, আমরা আমাদের মত জানিয়েছিলাম।”
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “অধ্যাদেশে আসা বেশিরভাগ সংশোধনীতে আমরা একমত। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে আমরা কখনোই সম্মতি দিইনি। সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেব নির্বাচন কমিশনে এবং আইন উপদেষ্টার কাছে।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এই খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুমোদিত খসড়ায় আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে—
– আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।
– পলাতক আসামিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
– প্রার্থীদের দেশ ও বিদেশে থাকা সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
– কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা হবে।
– ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কিত বিধান বাতিল করা হয়েছে।
– ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে।
এই সংশোধনীগুলোর অধিকাংশের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রতীকের বিষয়টি নিয়ে তিন দলই অসন্তুষ্ট।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। সেই লক্ষ্যে সরকার নির্বাচনসংক্রান্ত আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে বলে জানা গেছে।


