শেখ হাসিনার প্রতারণা ও ভণ্ডামিই আজ দেশের দুঃখ—রিজভী আহমেদের অভিযোগ

বিএনপি (BNP)-এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ভণ্ডামি ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং দেশের সম্পদ লুট করেছেন। শনিবার (২৪ অক্টোবর) নয়াপল্টনে জিয়া মঞ্চ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, “অনেক রাজনৈতিক দল নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয়—কেউ বলেন, মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন, কেউ বলেন হুরপরি পাইয়ে দেবেন। এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির দৌড়ে শেখ হাসিনাও পিছিয়ে নেই। ভোট পাওয়ার আশায় তিনিও সেই ভণ্ডামির পথেই হেঁটেছেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। “লন্ডনে নাকি তাদের ১৫০টি বাড়ি রয়েছে! অথচ শেখ হাসিনা বলেন, দেশ উন্নয়নের পথে, মানুষ শান্তিতে আছে। বাস্তবতা হলো, আজ হাটে-বাজারে এক মা সন্তান বিক্রি করছে, খাদ্যের অভাবে কাঁদছে। অথচ তিনি অবলীলায় মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “বিদ্যুৎ, পদ্মা সেতু, অবকাঠামো—সব ক্ষেত্রেই চলছে লোপাট আর হরিলুট। শেখ হাসিনা তার পরিবার, মেয়ে, ছেলে, ভাগ্নি, ভাগিনাদের বিলাসী জীবনের জন্যই এসব ব্যবস্থা করেছেন।”

রিজভীর দাবি, “ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি, শেখ রেহানারও বাড়ি আছে। তারপরও ৬০ কাঠা জমি পূর্বাচলে—কার নামে? শেখ হাসিনার সন্তানদের নামে, শেখ রেহানার সন্তানদের নামে। এমনকি শেখ হাসিনার এক ভাগ্নি ইংল্যান্ডের নাগরিক, সেখানকার সংসদ সদস্যও। তাহলে বাংলাদেশে এত সম্পত্তি কেন? ইংল্যান্ডে তো রাজনীতিবিদদের জবাবদিহি করতে হয়।” তিনি বলেন, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে এবং সরকারের ভেতরে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।

রিজভী আরও বলেন, “এই প্রতারণা আর মিথ্যাচারের ওপর ভর করেই শেখ হাসিনা তার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন—মানুষকে খুন করেছেন, গুম করেছেন, ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেছেন। ১৬ বছর ধরে তিনি জুলুমের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ইতিহাস বলে, কোনো লুটেরা বা খুনি চিরদিন টিকে থাকতে পারে না। তাদের পতন অনিবার্য।”

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা এখন নানা কৌশলে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। “পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় নাশকতার ইঙ্গিতও রয়েছে—এই প্রশ্ন এখন জনগণের মনে।”

বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)-কে নিয়ে তিনি বলেন, “তিনি জনগণের ভালোবাসায় সমাদৃত নেত্রী, কিন্তু বছরের পর বছর কারাবন্দি। তার চিকিৎসা থেকে ওষুধ—কোথাও ন্যায্যতা নেই।” রিজভীর দাবি, “মানুষের মধ্যে সন্দেহ আছে—শেখ হাসিনা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বিষপ্রয়োগ করেছেন কি না, কিংবা ওষুধে বিষ মিশিয়ে দিয়েছেন কি না। কারণ যিনি হেঁটে কারাগারে গিয়েছিলেন, সেই নেত্রী আজ বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন—এ নিশ্চয়ই পরিকল্পিত।”

তিনি আরও বলেন, “এই নির্যাতন শুধু খালেদা জিয়ার ওপর নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর ওপরও হয়েছে। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফল হিসেবে। এখন তিনি লন্ডনে থেকে দেশের খোঁজখবর রাখছেন, নেতাকর্মীদের মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন।”

রিজভী দাবি করেন, “তারেক রহমান আজও শহীদ পরিবারের সদস্য ও অসহায়দের পাশে রয়েছেন। তার নেতৃত্বেই বিএনপি মানবিক ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।”

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একদিকে শেখ হাসিনা শান্তির কথা বলেন, অন্যদিকে দেশে আগুনের ঘটনা ঘটছে একের পর এক—মিরপুরে রাসায়নিক গুদাম, বিমানবন্দর, লঞ্চ, চট্টগ্রামের স্থাপনা—সব জায়গায় আগুন! এটা কি কাকতালীয়, না কি ষড়যন্ত্র?”

রিজভী বলেন, “মানুষ শান্তি চায়, স্বাধীনতা চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা বন্দুকের নল দিয়ে আইন পাশ করেছেন, আদালত, হাইকোর্ট, নির্বাচন কমিশন—সবকিছু নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। নিজের খুন, লুটপাট ও নিপীড়ন বৈধ করতে তিনি সংসদকে হাতিয়ার বানিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জনগণের কণ্ঠের স্বাধীনতা থাকতে হবে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনেই আইন প্রণয়ন ও শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে হবে।”

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *