জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar)। তার দাবি, , যারা নভেম্বরের মধ্যে গণভোট না করে নির্বাচনের দিন তা আয়োজন করতে চায়, তারা মূলত জুলাই সনদকে অকার্যকর করতে চায়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “এই চক্রটি শুরু থেকেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিকে অস্বীকার করেছে। এখন গণভোটের নামে নানা ভ্রান্ত ও দ্ব্যর্থযুক্তি তুলে তা বাস্তবায়ন বিলম্বিত করার অপচেষ্টা করছে।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “নভেম্বরে গণভোট হলে আপত্তি কোথায়? তা জাতির সামনে স্পষ্ট করুন। এদেশের জনগণ এতটা বোকা নয় যে এসব কৌশল বুঝবে না। জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না।”
তার মতে, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করা উচিত। এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলেও দাবি করেন তিনি।
২৮ অক্টোবরের বিচার দাবি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আহ্বান
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর সংঘটিত নারকীয় লগি-বৈঠার হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও হয়নি, অথচ “তিন-চার দশক আগের ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচার চলতে পারে”। তাহলে এই ঘটনার বিচার কেন হচ্ছে না—এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
দ্রুত বিচার আইনের আওতায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার প্রকৃত আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। তার ভাষায়, “এই দিন থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান শুরু হয়।” জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে “প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ইনসাফ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে” বলেও দাবি করেন তিনি।
১৪ দল নিষিদ্ধ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ না করে কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। “এই জোট সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়,” বলেন তিনি।
সমাবেশে নেতৃত্ব ও বিক্ষোভ মিছিল
সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনসহ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বিজয়নগর-কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর অভিমুখে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নিয়ে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন।


