আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যৌথ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি (BNP)। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ (Gonotontro Moncho)-এর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি, যেখানে শীর্ষ ৬ নেতার নিজ নিজ আসন থেকে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চায় কি না—সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এ প্রশ্নের জবাবে গণতন্ত্র মঞ্চ নেতারা সংশ্লিষ্ট আসনে তাদের প্রার্থিতার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বিএনপিকে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাকি প্রার্থী তালিকা নিয়েও আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন মঞ্চ নেতারা।
কারা কোথা থেকে নির্বাচন করবেন?
গত ৯ অক্টোবর প্রথম দফায় ১৪২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ছয় দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এতে উল্লেখ করা হয়:
- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না — বগুড়া-২
- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক — ঢাকা-৮
- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি — ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬
- জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব — লক্ষ্মীপুর-৪
- রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম — কিশোরগঞ্জ-৫
- ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু — জামালপুর-৫
উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব নির্বাচন করলেও এবার শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের কারণে তিনি নির্বাচন করছেন না। তার পরিবর্তে তার সহধর্মিণী তানিয়া রব প্রার্থী হচ্ছেন।
আসন ভাগাভাগি ও ভবিষ্যৎ আলোচনা
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে অর্ধ-শতাধিক আসন দাবি আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে মঞ্চের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী তালিকা দেওয়া হয়নি। মঞ্চ নেতারা জানিয়েছেন, শীর্ষ ছয় নেতার আসনের বিষয়ে সমঝোতা হলে তখনই বাকি আসন নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপি ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থিতা নির্ধারণের পাশাপাশি শরিকদের মধ্যেও আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আরপিও সংশোধন নিয়ে আলোচনা
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদিত নতুন নির্বাচন সংশোধনী অধ্যাদেশ (আরপিও) নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, জোট করে নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এ বিধান নিয়ে আপত্তি তুলেছে উভয় পক্ষ।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মনে করেন, প্রার্থী চাইলেই যেন নিজ দল অথবা জোটের প্রধান শরিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন, সে সুযোগ রাখা উচিত। তারা এ বিষয়ে সংশোধনের পক্ষে একমত হন।
বৈঠকে কারা ছিলেন?
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে অংশ নেন সমন্বয়ক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার।
বৈঠক শেষে উভয় পক্ষই জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শরিকদের মধ্যে আসন সমন্বয়ের আলোচনা ভবিষ্যতেও চলবে।


