সংস্কার কমিশন জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে—এমন অভিযোগ তুলে কমিশনের সব সদস্যকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (Jamiat Ulama-e-Islam Bangladesh)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী।
শনিবার (১ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ শাহী ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত আজমতে সাহাবা সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতারা নোট অব ডিসেন্টসহ একটি সংস্কার কপিতে স্বাক্ষর করলেও কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে ভিন্ন কপি সরবরাহ করেছে—এটি জাতির সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা। এ ধরনের “চিটিংবাজি”-র দায়ে ডক্টর আলী রীয়াজ (Dr. Ali Riaz)সহ কমিশনের সকল সদস্যকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
কাসেমী পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam Bangladesh)-এর আমির আল্লামা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী, প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি জসিম উদ্দিন, জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির প্রমুখ।
‘সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষীরা ধ্বংস হবে’
বক্তৃতায় মাওলানা ইউসুফী বলেন, সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে ইসলামের শান্তির বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন বহু স্থানে তাদের ঈমান ও আমলের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যারা সাহাবাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা ধ্বংস হবে—এটি অনিবার্য সত্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সাহাবী বিদ্বেষীদের মাধ্যমে কখনো বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচার সম্ভব নয়।
সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত দাবি
ইউসুফী আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা প্রয়োজন। তাদের নৈতিকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, কমিশনের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতিকে আশ্বস্ত করতে হবে। তিনি বলেন, “এঁরা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন জালিয়াতি করলে, অতীতে কী করেছেন তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে জাতির সামনে প্রকাশ করা জরুরি।”
তিনি আরও জানান, সংস্কারের স্বাক্ষরকৃত কপির ওপরই জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে—রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো ভিন্ন কপির ওপর কোনো ভোটগ্রহণ চলবে না।
সরকার ব্যর্থ, দ্রুত নির্বাচনের দাবি
মাওলানা ইউসুফী বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন খাতে কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেনি। এনজিও কর্মকর্তা নির্ভর এই সরকার অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে দেশকে গভীর সংকটে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ইউসুফীর মতে, “সম্ভব হলে ফেব্রুয়ারির অপেক্ষা না করে আগে নির্বাচন দিয়ে এই ব্যর্থ সরকারকে বিদায় নিতে হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনানিবাস স্থাপনের আহ্বান
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী আমলের পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাতিল করে সেখানে পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, এ কাজের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। তাই নির্বাচনে বিলম্ব দেশকে বড় বিপদের মুখে ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করেন ইউসুফী।


