চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার ভেতর লুকিয়ে থাকা এক ধরনের ‘গুপ্ত স্বৈরাচার’ বাংলাদেশে ওত পেতে আছে—এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। রোববার রাতে গুলশানের হোটেল লেকশোরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধনের এ আয়োজন হয়। যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান অনলাইন পেমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং একক প্রার্থীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দেন।
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, “আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না যাতে প্রতিপক্ষ সেই বিরোধের সুযোগ নিতে পারে।” তিনি জানান, শিগগিরই বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসনে একক দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে এবং সেই প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, “প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা সবাই জনগণের সমর্থন পেতে কাজ করছেন, এটা স্বাভাবিক। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা সবাই বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন। বিজয়ী হবে দেশ এবং গণতন্ত্র।”
তিনি উদ্দীপনার সঙ্গে বলেন, “ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গরব মিলে-মিশে।”
মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে
তারেক রহমান জানান, দেশের তিনশ’ আসনে বিএনপি কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, এটা আমাদের দলের জন্য গৌরব এবং সম্মানের বিষয়।”
রাজপথের শরিকদেরও প্রার্থী করবে বিএনপি
তারেক রহমান স্পষ্ট করেন, “যেসব রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথে ছিল, তাদের মধ্য থেকে কিছু প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেবে। ফলে কোনো কোনো আসনে বিএনপি দলীয় নেতা মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। এ বাস্তবতাকে সবাইকে মেনে নিতে হবে, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে।”
তিনি আহ্বান জানান, “দয়া করে দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করুন।”
অপপ্রচারের জবাব ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অতীতে যেমন পতিত, পরাজিত স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, তেমনি আজও বিভিন্ন অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে, কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।”
সমঝোতার পথ ও সরকারের প্রতি সহযোগিতা
তিনি বলেন, “একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিও যথাসাধ্য সহযোগিতা করেছে।”
তবে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “বারবার নতুন শর্ত আরোপ করে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার পরিণতি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”
প্রবাসী ভোট নিয়ে ইতিবাচক অবস্থান
প্রবাসী ভোটারদের নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “প্রথমবারের মতো প্রবাস থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ চালু হয়েছে, যা কিছুটা জটিল মনে হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।” তিনি আশ্বাস দেন, “বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রবাসী ভোটের প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


