আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চারপাশে একে একে জড়ো হয়েছে তিনটি প্রধান জোটের অন্তর্ভুক্ত ৩০টি রাজনৈতিক দল, যারা এখন দলটির পাশে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। ব্যতিক্রম কেবল জামায়াতে ইসলামি, যারা এই মিত্র জোটে নেই।
গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট—এই তিন জোটের বাইরে থেকেও বাম গণতান্ত্রিক জোট, সিপিবি এবং হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক ইসলামী দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
এদের প্রত্যেকেই ২৪-এর জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট, সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন এবং পরবর্তী ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন—এই পুরো প্রক্রিয়ায় বিএনপির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো গণভোটের পক্ষে নয়। বরং নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে এবং একই ব্যয়ে আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে।
“ষড়যন্ত্র সফল হবে না”—বিএনপি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি অপশক্তি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তবে এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।” তিনি বলেন, “আমাদের ৩১ দফায় সংস্কারের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। পিআর না হলে নির্বাচন হবে না—এই ধরনের বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা সবাই মিলে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব ইনশাআল্লাহ।”
“জুলাই সনদ জনগণের দরকার নয়”—মেজর হাফিজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, “জনগণের দরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন—not জুলাই সনদ।” তিনি অভিযোগ করেন, “জুলাই সনদ আসলে উপদেষ্টাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশলমাত্র।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপি বারবার ছাড় দিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু অনেকে এটিকে দুর্বলতা ভেবে বসেছে।”
“বৃহত্তর ঐক্যই শক্তি”—মাহমুদুর রহমান মান্না
নাগরিক ঐক্য-র সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ একসঙ্গে কাজ করছে। বৃহত্তর ঐক্য হলে সেটি সবার জন্যই ভালো।”
গণফোরাম, এলডিপি, সিপিবি, জাসদ ও লেবার পার্টিও একমত
- অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ভবিষ্যতেও বিএনপির সঙ্গে থাকব।”
- ড. রেদোয়ান আহমেদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র মহাসচিব বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন চাই। গণভোট নয়।”
- সাজ্জাদ জহির চন্দন, সিপিবি-র সভাপতি বলেন, “সংবিধানে গণভোটের সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। একমাত্র ১৪২ ধারা অনুযায়ী সংসদ চাইলে গণভোট আহ্বান করতে পারে। এই মুহূর্তে সেটি প্রযোজ্য নয়।”
- শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশ জাসদ-এর সভাপতি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন আগে হওয়াটাই এখন জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।”
- ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ লেবার পার্টি-র চেয়ারম্যান বলেন, “২৪-এর জুলাই সনদ থেকে শুরু করে নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠন পর্যন্ত—সব প্রক্রিয়ায় আমরা বিএনপির সঙ্গে একমত।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, নির্বাচন ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের যে চেষ্টা বিএনপি নিয়েছে, তার পেছনে এখন রয়েছে তিনটি বড় জোট ও অসংখ্য শরিক রাজনৈতিক দল। গণভোট, পিআর বা বিকল্প প্রক্রিয়ার বদলে তারা চাইছে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেখানে অংশগ্রহণ করবে জনগণ, সিদ্ধান্ত নেবে গণতন্ত্র।


