দীর্ঘ সংলাপ ও আলোচনার পর গঠিত হয় ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। নামটি যেমন আশাব্যঞ্জক, ফলাফল তেমনই হতাশাজনক। কমিশনটি বাস্তবে ঐকমত্য নয়, বরং নতুন অনৈক্যের জন্ম দিয়েছে। মাসের পর মাস আলোচনার পরও ফল যা এসেছে, তা যেন পুরনো প্রবাদটির মতো— মূষিক প্রসব।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিরল ঐকমত্য দেখা গিয়েছিল, সেটি ছিল জাতির জন্য আশার প্রতীক। কিন্তু আজ সেই ঐকমত্যের কোনো ছাপই নেই। বরং রাজনৈতিক ময়দান আবারো বিভক্ত— একদিকে ক্ষমতা, অন্যদিকে সুযোগসন্ধানী কৌশল।
বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এখন যে অবস্থান নিয়েছে, তা জাতীয় ঐকমত্যের ধারনাকে আরও জটিল করেছে। তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবর্তে দাবি তুলেছে ‘গণভোট’-এর। তাদের ব্যাখ্যা, এটি “জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া”।
কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে জন্ম নিয়েছে গভীর সন্দেহ ও শঙ্কা। অনেকে মনে করছেন, এটি আসলে জাতীয় নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলার এক পরিকল্পিত কৌশল, যার পেছনে আওয়ামী লীগ ও আঞ্চলিক প্রভাবশালী শক্তিগুলোর ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।
এই সন্দেহ নিছক কল্পনা নয়; বরং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তার যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ক্রমাগত নতুন দাবি ও কর্মসূচির মাধ্যমে যখন নির্বাচনের সময়সূচি ও কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, তখন জনগণের মনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিশেষ করে জামায়াতের ১১ তারিখের আল্টিমেটাম আর আওয়ামী লীগের ১৩ তারিখের রাজধানী শাটডাউনের ঘোষণা এমন সন্দেহকে অনেকটাই সামনে নিয়ে আসছে। দাবি ভিন্ন হলেও চূড়ান্ত লক্ষ্য মূলত একই। দুটি পক্ষ’রই মূল লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করা, আরেকটি ১/১১’র ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এটা এখন শুধু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব না এটা এখন অনেকটাই বাস্তবতা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ঐকমত্য’ আজ এক প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। সংলাপ ও কমিশনের আড়ালে চলছে ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের খেলা। অথচ দেশের মানুষ চায়— একটি স্পষ্ট, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।
রাজনীতির সব পক্ষেরই বোঝা উচিত, জনগণের আস্থা হারানো মানে গণতন্ত্রের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাওয়া। ঐকমত্যের নামে অনৈক্য সৃষ্টি করে কেউ শেষ পর্যন্ত লাভবান হবে না। এখন সময় এসেছে কথার নয়, কাজের মাধ্যমে দেখানোর— তারা সত্যিই জাতীয় স্বার্থে একসাথে দাঁড়াতে চায়।


