প্রধান উপদেষ্টার গণভোটের ঘোষণার ২৪ ঘন্টা পর অবশেষে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলো এনসিপি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের অবস্থানকে অস্পষ্ট, পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগীদের অনুকূলে আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে যে অস্পষ্টতা রাখা হয়েছে, তাতে এই সনদ আদৌ পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদেশ এমনভাবে রচিত হয়েছে, যেন ক্ষমতাবানরা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, সরকার সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়নের রূপরেখা দেবে। ১৮০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হলেও ব্যর্থ হলে কী পরিণতি হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এমনকি সংবিধানে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা, তা নিয়েও কিছু বলা হয়নি।”
আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, গণভোটের বিভিন্ন বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “গণভোটকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, কিছু সংস্কারকে কম গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক দলের বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক।”
নোট অব ডিসেন্ট প্রসঙ্গে এনসিপির এই নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে অনেকেই তাদের মত অনুযায়ী নোট অব ডিসেন্টকে প্রাধান্য দিতে চাইবেন। তাই আমরা চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গণভোটে ‘অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, সেটিও স্পষ্ট নয়। প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কিনা, সেটি নিয়ে গণভোটের ফলাফলের পরও রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছানির্ভর সংস্কারের সুযোগ দেওয়া কেন—তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি দুদক-কে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও, সেটিও আদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “সরকার রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে জুলাই সনদকে অপবিত্র করেছে। এক হাসিনা যাওয়ার পর আরেক হাসিনার জন্য রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। এটি দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সনদের আইনি ভিত্তি আছে, কিন্তু নৈতিক ভিত্তি নেই। কারণ এখানে বিএনপি ও জামায়াত-এর মতামত প্রাধান্য পেয়েছে। সরকার দরদ দেখালেও দায় নেয়নি। আদেশে সবার জন্য ১ চামচ করে তরকারি ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু জনগণ কিছুই পায়নি। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে খুশি করেছে, কিন্তু জনগণকে পাশ কাটিয়ে গেছে।”
পাটওয়ারী বিএনপি ও জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়াকে ভোটব্যাংক তৈরির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন না।”
সবশেষে এনসিপি জানায়, সরকার নানা অস্পষ্টতার ভেতরে থেকেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করেছে, যা তারা সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক বলেই বিবেচনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রমুখ।


