নির্বাচনী প্রচারণায় তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে আপত্তি এনসিপির

নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রথম সংলাপেই আচরণবিধি বাস্তবায়নে কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party)। বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে নিবন্ধিত সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশ নেয় নব-নিবন্ধিত দলটি।

সংলাপে এনসিপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

আচরণবিধির ৭(চ) ধারাকে ‘কমিশনের প্রথম পরীক্ষা’ আখ্যা দিয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির বর্তমান প্রধান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমানের ছবি বিএনপির কোনো প্রার্থী যদি ব্যবহার করেন, তাহলে কমিশনকে সেই বিধান প্রয়োগ করতে হবে। তখনই দেখা যাবে, এই কমিশনের বাস্তব সক্ষমতা কোথায় দাঁড়িয়ে।”

উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে আচরণবিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তার ৭(চ) উপধারায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী কেবলমাত্র তার দলের বর্তমান প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যানার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল বা ফেস্টুনে এই ছবি ব্যবহারযোগ্য হলেও পোস্টারে তা নিষিদ্ধ।

সংলাপে এনসিপি অভিযোগ করে, নতুন আচরণবিধি দেশের প্রচলিত নির্বাচনী সংস্কৃতি ও উৎসবমুখর পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দলের প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম বলেন, “বিধিমালায় বলা হয়েছে কাপড় বা চটের ওপর ব্যানার করতে হবে। কিন্তু চটের ওপর প্রিন্ট দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কতটুকু? বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো এ সুযোগ একেবারেই নেই।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে সাউন্ডবক্স ব্যবহারের সীমা নিয়ে। আচরণবিধিতে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারে সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হলেও এনসিপির প্রতিনিধি প্রশ্ন তোলেন, “এই শব্দ পরিমাপ করবে কারা? কয়জনের কাছে শব্দ পরিমাপক যন্ত্র আছে? অভিযোগ কোথায় করতে হবে—তাও তো বলা নেই।”

তদন্ত কমিটি গঠনের অস্পষ্টতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তার বক্তব্য, “বিধিমালায় বলা আছে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দিতে হবে, অথচ সেই কমিটির কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আইনেই নেই। এতে প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।” একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন—যদি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পর কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা না নেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া কী হবে?

জহিরুল ইসলামের দাবি, প্রণীত আচরণবিধিতে কাঠামোগতভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তবে আচরণবিধির ২৪ ও ২৫ ধারা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এনসিপি। এই ধারাগুলোর মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দের পর সব প্রার্থীর সামনে নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ এবং আচরণবিধি মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিধান রয়েছে, পাশাপাশি টেলিভিশনে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এনসিপির দাবিতে, এসব ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

নির্বাচনি সহিংসতা প্রতিরোধে অতিরিক্ত বিধান সংযোজনের প্রস্তাবও দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব। তার পরামর্শ, কোনো দলের অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় কেউ আহত বা নিহত হলে, সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান থাকা উচিত।

সংলাপে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন না, তবে সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নিরপেক্ষ আচরণ করার আহ্বান জানান। তিনি জানতে চান, “আসন্ন গণভোটের নীতিমালা কবে পাওয়া যাবে?”

নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, “কমিশন যদি সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে এবং কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে এনসিপি শতভাগ সহযোগিতা করবে।”

এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-এ জোটগত প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিধান সংশোধনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান, এই সিদ্ধান্তে যেন কমিশন অনড় থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *