ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়া বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই পড়েছে মাত্র তিনটি আসনে—এমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রশ্ন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এ বরাদ্দের অধিকাংশই দেওয়া হয়েছে ঢাকার ৯, ১০ ও ১১ নম্বর আসনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে ঢাকা-১০ আসনের ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট এলাকার ১৪৫টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির।
মোট ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে অর্ধেকের বেশি—৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা—ঢাকা-১০ আসনেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ ঘোষণার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই ওই এলাকার ভোটার হয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ (Asif Mahmud)। আসন্ন নির্বাচনে তিনি এখান থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে, যা এই বরাদ্দকে আরও বিতর্কিত করেছে।
এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে বা কাদের সুপারিশে এসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। বরাদ্দপত্রের আবেদন নানা দিক থেকে আসায় সেসব খোঁজ রাখা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, ঢাকা-৯ (সবুজবাগ, খিলগাঁও) ও ঢাকা-১১ (বাড্ডা, রামপুরা) আসনের মোট ১২৮টি প্রতিষ্ঠানকেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই দুই আসনে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party – NCP) নেতারা—নাহিদ ইসলাম ও তাসনিম জারা।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে—ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা ঢাকার যেসব আসনে প্রার্থী হবেন, কেবল সেসব এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসায়ই কি এই বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলো? উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের মতে, “বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। সারা দেশের অন্য জায়গাতেও তো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
তবে বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনপূর্ব সময় বিবেচনায় নৈতিকতার প্রশ্নও উঠছে। কারণ, নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এমন উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন বরাদ্দ দেওয়া যায় না। ডিসেম্বরের শুরুতেই তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা থাকায়, এখনই বৈধতা না থাকলেও বরাদ্দের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা চলছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের (Local Government Reform Commission) সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম (Mohammad Tarikul Islam) বিবিসিকে বলেন, “নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে জেলা পরিষদের এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ কিছু আসনের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও গত ৫ অক্টোবর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৪২ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো ছড়িয়ে ছিল ১০টি আলাদা এলাকায়, তাই সে সময় বিতর্ক উঠেনি।
আসিফ মাহমুদ বরাদ্দ বিতর্ক নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন—“সারা দেশেই তো বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সবগুলো নিয়ে রিপোর্ট না করে শুধু ঢাকার আসনগুলোর উপরেই কেন বিবিসি বাংলা রিপোর্ট করছে?”
নির্বাচনের আগেই উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ঢাকার একটি আসনে নির্বাচন করবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। ফলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বরাদ্দকে অনেকেই সম্ভাব্য নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখছেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তারিকুল ইসলামের মতে, “যখন সরকার নানা খাতে সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায়, তখন এই ধরনের নির্বাচনী বরাদ্দ রাজনৈতিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ।”


