বিদেশ থেকে ছুটিতে আসা বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যার পর অস্ত্র হাতেই থানায় গেল যুবক

ময়মনসিংহের ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে মুনতাসীর ফাহিম নামের এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই বন্ধু অহিদুল ইসলাম অনিক। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মুনতাসীর ফাহিম (২২) ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা মনোহর গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম অনিক ত্রিশাল পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি নজরুল একাডেমির ভোকেশনাল শাখার দক্ষিণ পাশে পানির ট্যাংকির কাছে ফাহিমের ওপর চাইনিজ কুড়াল দিয়ে হামলা চালায় অনিক। ঘটনাস্থলেই ফাহিমের মৃত্যু হয়। রাত ৯টার দিকে অভিযুক্ত অনিক চাইনিজ কুড়াল হাতে নিয়েই ত্রিশাল থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে জানায়, সে তার বন্ধু ফাহিমকে হত্যা করেছে। এরপর পুলিশ তাকে শান্ত করে হেফাজতে নেয় এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফাহিমের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে একটি চাইনিজ কুড়াল নিয়ে অহিদুল ইসলাম অনিক নামে এক যুবক থানায় হাজির হয়ে পুলিশকে জানায়, ‘ফাহিম আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, তাই তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছি’।

এমন কথা শুনে থানা পুলিশ ঘাতক অনিককে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠের পূর্ব পাশের পানির ট্যাংকের সঙ্গে ফাহিমের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ফাহিমের নানি মাকসুদা আক্তার বলেন, আমার নাতি পৌর এলাকার হাসপাতালের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন। মালেশিয়ায় পড়াশোনা করত সে। চার মাস আগে মালেশিয়া থেকে দেশে আসে। ২৫ ডিসেম্বর তার মালয়েশিয়াতে ফেরার ফ্লাইট ছিল। ফাহিম সব সময় বাসায় থাকত, অনিক তাকে ডেকে নিয়ে যেত। সে পরিকল্পনা করে আমার নাতিকে হত্যা করেছে।

ফাহিমের বাবা রেজাউল ইসলাম বাদল বলেন, আমার ছেলে বিদেশে লেখাপড়া করে, কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছুটিতে দেশে আসছে। আগামী শনিবার (২৯ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কেন আমার ছেলেকে হত্যা করল জানি না। অনিক পরিকল্পিতভাবে ফাহিমকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। ছেলে হত্যার কঠিন বিচার দাবি করছি।

ত্রিশাল থানার ওসি (তদন্ত) শেখ গোলাম মোস্তফা রুবেল বলেন, ফাহিমকে খুন করে রক্তমাখা ধারালো চাইনিজ কুড়াল হাতে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে ঘাতক অহিদুল ইসলাম অনিক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের কথা স্বীকার করেছে। ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহমেদ বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার অনিককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *