খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়া নিয়ে নতুন ভাবনা মেডিকেল বোর্ডের,ক্রমোন্নতির পথে খালেদা জিয়া

ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে সেরে উঠছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। চিকিৎসকদের মূল্যায়ন অনুযায়ী তার স্বাস্থ্যের আরও কিছু উন্নতি হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সিটিস্ক্যানসহ একাধিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়, যার সব রিপোর্টই তুলনামূলক ভালো এসেছে। এমন অগ্রগতির পর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড নতুনভাবে ভাবছে—বিদেশ না নিয়ে দেশেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব কি না। কারণ দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি খালেদা জিয়ার আস্থা দীর্ঘদিনের।

তবে বোর্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। রোববার রাতে বোর্ডের একজন চিকিৎসক এবং বিএনপির দায়িত্বশীল দুই নেতা জানান, আগের চেয়ে খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। চিকিৎসকের ভাষায়, তিনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল, আর বোর্ডও চেষ্টা করছে তাকে দেশেই সুস্থ করে তোলার। এর আগেও আরও জটিল অবস্থায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন—সে অভিজ্ঞতাও চিকিৎসকদের আশাবাদী করছে।

রোববার করা সিটিস্ক্যান, ইসিজিসহ সব পরীক্ষার রিপোর্ট স্বস্তিদায়ক। চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন প্যারামিটার উন্নতি দেখাচ্ছে। লন্ডনে নেওয়ার প্রয়োজন এ অবস্থায় কমে আসতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। তবে সিসিইউতে আরও কতদিন থাকতে হবে—তা নির্ভর করছে তার অবস্থার ওপর। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মিলেই তার চিকিৎসায় সমন্বয় করছেন।

তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান (Zubaida Rahman) শয্যাপাশে থেকে চিকিৎসার সব কিছু তদারকি করছেন। তিনি কয়েকদিন দেশেই থাকবেন বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়া স্বজনদের সঙ্গে এখন কিছুটা কথা বলার চেষ্টা করছেন। সার্বক্ষণিক পাশে রয়েছেন তার ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই পুত্রবধূ।

এদিকে কাতারের আমিরের সৌজন্যে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত অবস্থায় আছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। মেডিকেল বোর্ড চাইলেই অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় এসে পৌঁছাবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক চৌধুরী (Enamul Haque Chowdhury) জানান, বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেই লন্ডনে নেওয়ার ব্যবস্থা হবে। কাতার সরকার যেকোনো সময় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে প্রস্তুত। রোববার সকালে সিসিইউতে গিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা দেখে তিনি জানান—আগের চেয়ে তিনি ভালো আছেন, সাড়া দিচ্ছেন। দোয়া করলে তিনি এই সংকট কাটিয়ে উঠবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এর আগে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে বিএনপি জানিয়েছিল, কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এসে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাবে, এবং তার বড় পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানও একই বিমানে যাত্রা করবেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে সেই দিন বিমানে আসা হয়নি। শনিবার আসতে পারে বললেও রোববার পর্যন্ত তা পৌঁছায়নি—তবে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন। দীর্ঘ ফ্লাইট সামলানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় তার বিদেশ যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে বলে বোর্ড আগেই জানিয়েছিল।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন (AZM Zahid Hossain) বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটি যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য—চিকিৎসকরা জরুরি আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সেই সময় তার ফ্লাই করা উপযুক্ত নয়। তাই তার বিদেশ যাত্রা কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও তার শারীরিক অবস্থাই নির্ধারণ করবে কবে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকলেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তাকে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *