দেশ থেকে পাচার হওয়া প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকার সন্ধান, কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মেগা প্রকল্পগুলোর দুর্নীতির পুরো চিত্র—কোনোটিই এখনো উন্মোচন করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission–ACC)। এর মাঝেই নতুন বিতর্ক: গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিজয়ী পক্ষও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে—অভিযোগ করেছে টিআইবি (Transparency International Bangladesh)।
অন্যদিকে দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন (Abdul Momen) দাবি করেছেন, দেশে দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে “গডফাদার চক্র” গড়ে উঠেছে, যাদের প্রভাব কাটানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ করে দুর্নীতির শ্বেতপত্র। সেখানে উঠে আসে—গত ১৪ বছরে বিদেশে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরে গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন আওয়ামী ঘরানার সুবিধাভোগীরা। পাচারের অর্থ উদ্ধারে তৎপরতা চলছে; শেখ হাসিনা পরিবার, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সুবিধাভোগীদের সম্পদ উদ্ধারে দুদক ইতোমধ্যে ১৯টি দেশে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে সবকিছু এখনো চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে।
অন্যদিকে বর্তমান কমিশনের দাবি, গত এক বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, মামলা ও তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই পটভূমিতেই পালিত হলো আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরতে তাদের চেষ্টার ঘাটতি নেই। তার ভাষায়, “সন্ত্রাসীদের যেমন গডফাদার থাকে, দুর্নীতিবাজদের রক্ষায়ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গডফাদার তৈরি হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক রাখতে হলে সর্বত্র সৎ লোক বসাতে হবে—আমরা সেই চেষ্টা করছি।”
অন্যদিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান (Dr. Iftekharuzzaman) মনে করেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরেও সব সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বিজয়ী পক্ষ। পাশাপাশি দুদক সংস্কারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, দুর্নীতির অন্যতম অনুঘটক রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক ও ব্যবসায়িক ত্রিমাত্রিক আঁতাত। এই বন্ধন ভেঙেছে—এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাবনাও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি বলে মনে করেন তিনি।
রূপপুরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্তে নেমেও অধিকাংশ ঘটনায় এখনো অগ্রগতি নেই। ক্ষমতার পালাবদলের পরও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বা আলোচিত দুর্নীতির মামলায় বড় কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। জনমনে তাই প্রশ্ন—দুদক কি এখনো ক্ষমতাধর মহলের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থা বদলাতে প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং একটি প্রভাবমুক্ত পরিবেশ—যেখানে তদন্ত সংস্থাগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে।


