টাকা চুরির বিষয়ে সন্দেহ করায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার খুন করেছেন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের সূত্র।
আয়েশাকে (২০) আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। এ সময় তাঁর স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকেও আটক করে পুলিশ।
মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে ছুরিকাঘাতে খুন হন গৃহবধূ লায়লা আফরোজ ও তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাফিসা। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন চার দিন আগে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেওয়া আয়েশা। লায়লার স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবীমস স্কুলের শিক্ষক। সেদিন সকালে তিনি স্কুলে চলে যাওয়ায় বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে ছিলেন।
পুলিশের সূত্র জানায়, আয়েশা মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকার কথা বললেও তা সত্যি নয়। ঘটনার চার দিন আগে তিনি ওই বাসায় কাজ নেন। এর দুদিন পর ওই বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে তাঁকে বাসার লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু আয়েশা চুরির কথা অস্বীকার করেন এবং এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। চুরি প্রমাণ হলে তাঁকে পুলিশে দেওয়ার কথা বলেন লায়লা ও নাফিসা। পরদিন সকালে আয়েশা অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই সঙ্গে একটি ছুরি নিয়ে ওই বাসায় যান। চুরির বিষয়ে আবার তাঁরা জানতে চাইলে আয়েশা অস্বীকার করলে তাঁকে বাসায় থাকতে বলা হয় এবং গৃহকর্তা আজিজুল ইসলাম স্কুল থেকে বাসায় এলে পুলিশে দেওয়ার কথা বলেন। আয়েশা তাতে সম্মতি দেন। এরপর যে যাঁর মতো বাসায় ব্যস্ত থাকেন। একপর্যায়ে লায়লাকে ছুরিকাঘাত করেন আয়েশা। তাঁকে ধরে রাখায় লায়লার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নাফিসাকেও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন আয়েশা।
পুলিশ জানায়, আয়েশা জেনেভা ক্যাম্পে থাকতেন না। কাজ পাওয়ার জন্য জেনেভা ক্যাম্পে থাকার ভুল তথ্য দেন। তিনি কাজের জন্য ঢাকায় আসেন। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে থাকতেন সাভারের হেমায়েতপুরে। দুজনকে হত্যার পর ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আয়েশা হেমায়েতপুরে যান। ওই বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন নদীতে ফেলে দেন। কোনো ফোন, নাম, পরিচয় না থাকায় তাঁকে খুঁজে পেতে সব ধরনের চেষ্টা চালাতে হয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। দুদিন পুলিশের তৎপরতা ও গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আসায় স্বামী জামালকে ঘটনা জানান আয়েশা। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা গতকাল সকালে সাভার থেকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কয়রাচরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকেই দুপুরে আয়েশাকে গ্রেপ্তার ও তাঁর স্বামীকে আটক করা হয়।
হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মা-মেয়েকে হত্যা করেন গৃহকর্মী আয়েশা। তাঁকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে আয়েশা এবং গ্রেপ্তার
জোড়া খুনের মামলার আসামি আয়েশাকে নিয়ে গতকাল প্রথম ঝালকাঠির নলছিটিতে নিজ গ্রামের বাড়িতে যান জামাল সিকদার রাব্বি। ১৫ বছর আগে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হলে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। গতকাল সকালে হঠাৎ আয়েশাকে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বাড়িতে হাজির হয় মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, আয়েশা মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে হত্যা মামলার পলাতক আসামি।
পুলিশ ও গ্রামের লোকজন জানান, আয়েশা নরসিংদীর সলিমগঞ্জের রবিউল ইসলামের মেয়ে। জামালের বাবার নাম জাকির সিকদার। এক সময় কারখানার শ্রমিক ছিলেন জামাল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাব্বি তাঁর নানার সহায়তায় চাচার বাড়িতে ওঠেন। তিনি নিজেই বাবার বাড়ি চিনতে পারছিলেন না।


