রাজশাহীর রাজশাহী (Rajshahi) জেলার তানোরের তানোর (Tanore) উপজেলার এক প্রান্তিক গ্রামজুড়ে এখন দমবন্ধ অপেক্ষা। মাত্র দুই বছরের শিশু সাজিদ—যে সকালেও দৌঁড়ে খেলত, দুপুরে খেলতে খেলতে হঠাৎ হারিয়ে যায় ৪০ ফুট গভীর একটি নলকূপের গর্তে। সময় গড়িয়ে গেছে ১৬ ঘণ্টা, কিন্তু সেই অন্ধকার, মাত্র ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সরু পাইপের ভেতর থেকে এখনো বের করে আনা যায়নি ছোট্ট শিশুটিকে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামের ধানখড়ের মাঠে খেলতে গিয়ে হঠাৎ নিচে পড়ে যায় সাজিদ। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা—তবুও গর্তের ভেতর অন্ধকার, সংকীর্ণতা আর গভীরতা যেন সবকিছু আরও কঠিন করে তুলেছে।
ফায়ার সার্ভিস (Fire Service) কর্মীরা গর্তের পাশেই অবস্থান নিয়ে মুহূর্তের পর মুহূর্ত খুঁজে চলেছেন সামান্যতম সম্ভাবনার আলো।
এদিকে সেই অসহায়তার সবচেয়ে ভারী বোঝা নিয়ে ছুটে আসেন সাজিদের বাবা, মোহাম্মদ রাকিব। ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন তিনি। দুপুরে ফোনে জানতে পারেন—তার দুই বছরের ছেলে গভীর গর্তে পড়ে গেছে। খবর শোনার পর আর এক মুহূর্তও দেরি করেননি। কাজের জায়গা থেকেই ছুটে বেরিয়ে পড়েন রাজশাহীর পথে। রাতের মধ্যেই পৌঁছে যান তানোরে, নিজের গ্রামে।
গ্রামে এসে তিনি দেখলেন—চারপাশ অন্ধকার, প্রচণ্ড শীত, কিন্তু মানুষের অপেক্ষা থেমে নেই। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউ দোয়া করছে, কেউ চোখ মুছছে। আর মাঝখানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রাণপণে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখে নিজের ভেতরের শক্তি আর ধরে রাখতে পারেননি রাকিব। একসময় হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন।
দুই হাত দিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলতে লাগলেন—
“ছেলে গর্তে পড়ার অনেক পরে আমি খবর পেয়েছি। খবর পেয়েই রওনা দিয়েছিলাম। এখনো ছেলেকে দেখতে পেলাম না। বেঁচে আছে কি না—কিছুই জানি না…”
রাত আরও গভীর হয়। শীত বাড়ে। মানুষ থেমে থাকে না—প্রার্থনায়, আশায়, উদ্বেগে। আর খড়ের গাদার ওপর বসে থাকা রাকিব তখন শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। চোখ শুকিয়ে এসেছে, কিন্তু ঠোঁট কাঁপছে।
হালকা কাঁপা গলায় শুধু একটি কথাই বলতে পারছিলেন—
“আমি আর কিছু বলতে পারি না। এখন আল্লাহর উপরই ভরসা। ছেলেকে আল্লাহর জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। তিনি যা ভালো মনে করবেন, তাই করবেন…”


