বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি ও সাম্প্রতিক হামলার বিচারের দাবিতে রাজধানীতে ‘প্রতিরোধ যাত্রা’

বৈষম্যবাদী তৎপরতা, মব সন্ত্রাস এবং বাউল–প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর ধারাবাহিক হামলার প্রতিবাদে, একই সঙ্গে বাউল আবুল সরকারের মুক্তিসহ নয় দফা দাবিতে আক্রান্ত ও ফ্যাসিবাদবিরোধী নাগরিক সমাজের উদ্যোগে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো ‘প্রতিরোধ যাত্রা’। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ (Professor Anu Muhammad) বক্তব্যে বলেন, সমাজজুড়ে ক্রমাগতভাবে বৈষম্যবাদী প্রবণতা, সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং মব-সন্ত্রাস বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত মাজার, বাউল সংগীতের আসর এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর আবারও বলা হচ্ছে যে নির্বাচনের সময়ে কোনো বিক্ষোভ হলে সরকার কঠোরভাবে তা দমন করবে। আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণের বৈধ প্রতিবাদের পথে বাধা না দিয়ে সরকার বরং জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং বৈষম্যের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে সরে আসুক।

বক্তারা জানান, বাউল আবুল সরকারের মুক্তি, বাউল–সুফি–মাজার–দরবারসহ জাতি–ধর্ম–লিঙ্গ–শ্রেণী–পেশা নির্বিশেষে মানুষ ও প্রাণ–প্রকৃতির ওপর চলমান হামলার বিচার, ইন্টারিম সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র ও সংস্কৃতি উপদেষ্টার পদত্যাগসহ মোট নয় দফা দাবিতে প্রতিরোধ যাত্রা আয়োজন করা হয়েছে।

সমাবেশের প্রথম পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (Bangladesh Udichi Shilpigoshthi)-র সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন এবং বটতলার থিয়েটারকর্মী কাজী রোখসানা রুমার সঞ্চালনায় কর্মসূচিটি শুরু হয়। দিনটি ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (Maulana Abdul Hamid Khan Bhashani)-র ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী; তাঁর স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা।

সমাবেশে গণসাংস্কৃতিক ঐক্য এবং উদীচীর শিল্পীরা দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন। শামসুজ্জামান মিলন একক আবৃত্তি উপস্থাপন করেন, আর আবৃত্তি ফেডারেশন দলীয় পরিবেশনা করে। মঞ্চে বটতলা ও প্রাচ্যনাট দুটি নাটক মঞ্চস্থ করে। বাংলাদেশ বাউল সমিতির পক্ষ থেকে বাউল আলমাস সরকার, সুজন সরকার, মিলন সরকার এবং গোলাম মোর্শেদ মিরণ বাউলগান পরিবেশন করেন, যা সমাবেশের আবেগ ও প্রতিবাদকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

সাংস্কৃতিক আয়োজন শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মশাল হাতে যাত্রা শুরু করে মিছিলটি প্রেস ক্লাবের দিকে অগ্রসর হয়, যেখানে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

বার্তাবাজার/এমএইচ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *