বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও, একটিও নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। অথচ চলতি বছরের জুলাইয়ে জাতীয় সনদে সই করা রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার ছিল, অন্তত ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী দেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জামায়াতের কমপক্ষে ১৫টি নারী প্রার্থী থাকার কথা ছিল।
দলের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তালিকায় কোনো নারী প্রার্থীর নাম নেই। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইসলামিক অনুশাসন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলায় নারী প্রার্থী মনোনয়ন তাদের জন্য একটি ‘চ্যালেঞ্জ’। যদিও আলোচনায় ২-৩ জন নারী প্রার্থীর নাম গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা মনোনয়ন পর্যন্ত গড়ায়নি।
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত নারী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ফলে শূন্য শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বই দলটির আদর্শিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেকে। এমনকি জামায়াত নেতৃত্বাধীন আট দলের জোটেও একটিও নারী প্রার্থী নেই।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামিক নিয়মে চলা দল। এখানে নারীদের প্রার্থী করা বহুস্তর চ্যালেঞ্জ। একজন নারী প্রার্থীকে স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়, যা অনেক সময়েই পাওয়া যায় না। তাছাড়া, প্রচার-প্রচারণায় গিয়ে ইসলামী অনুশাসন মেনে কাজ চালিয়ে যাওয়া, ভাষণ দেওয়া, মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো নারী প্রার্থীদের জন্য বেশ কঠিন। অন্যদিকে, অনেক নারী সদস্যের মধ্যেই নির্বাচনী আগ্রহের ঘাটতিও রয়েছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম (Abdul Halim) বলেন, “নারীদের প্রার্থী করার বিষয়টি এখনো আলোচনার মধ্যে আছে। আমাদের ভাবতে হচ্ছে, কারণ এখানে সংগঠনের নীতিমালার ব্যাপার আছে। সেইসঙ্গে আমাদের নারীকর্মীদের আগ্রহও একটা বিষয়।”
তবে দলীয় আলোচনায় কয়েকজন নারীর নাম এসেছে, যাদের মধ্যে আছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা নুরুন্নিসা সিদ্দিকা। যদিও তিনি কোন আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন, তা জানা যায়নি। তেমনি আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. আমিনা রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা বিভাগের সিনিয়র সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য সাবেক এমপি শাহান আরা বেগম, এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার সাবিকুন্নাহার।
তবে শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ প্রার্থী হচ্ছেন কি না, সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এখনো চূড়ান্ত তালিকায় কোনো নারী প্রার্থীর নাম নেই।
জাতীয় সনদে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের যে প্রতিশ্রুতি দলটি দিয়েছিল, তার এমন ব্যত্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও জামায়াত বলছে, ইসলামিক নীতিমালা, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনায় রেখে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।


