হাদি হ’\ত্যা’\র প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি হলপাড়া হয়ে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে রোকেয়া হলের সামনে যাত্রী ছাউনি এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিলে নেতাকর্মীদের ‘উই ওয়ান্ট, উই ওয়ান্ট—জাস্টিস ফর হাদি’, ‘খুনি কেন বাহিরে, আমার ভাই কবরে’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ও ‘জুলাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে তিনি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

নাছির উদ্দীন নাছির অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যারা দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, অবৈধ নির্বাচন আয়োজন করেছে, তারাই হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে একটি আসন্ন গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। ছাত্রদল এসব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকবে এবং প্রয়োজন হলে রাজপথে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।

তিনি আরও বলেন, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যারা গুজব ছড়াচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাচ্ছে, ছাত্রদল তাদের তৎপরতা প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে তিনি হাদির পরিবার ও তার সন্তানের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে একজন নির্ভীক সৈনিক ছিলেন। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হাদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু ঠিক সেই সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।

গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, একের পর এক জুলাই-আগস্টের যোদ্ধারা যদি এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে।

তিনি আরও বলেন, শহীদ হাদির নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার দেখানো পথে ছাত্রদল গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

বিক্ষোভ শেষে ছাত্রদল নেতারা হাদির হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা গণতন্ত্রবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে সন্ত্রাসীরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পরবর্তীতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *