বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের সকল অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় জনগণ ক্ষমা করবে না। বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটের এক ফাঁকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনাসহ তার দলের সংশ্লিষ্ট সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে আইনানুগ সকল কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করছি, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো। এটি করা আবশ্যক, অন্যথায় জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, তিনি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও দায়মুক্তি প্রদান করবেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
দ্য ন্যাশনাল-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত গ্রীষ্মে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তার পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা এককভাবে ১৫ বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশ শাসন করেছেন। তবে, গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক সমর্থকদের ব্যবহার করেন তিনি, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ১১,০০০-এর বেশি মানুষ আহত হন। পরবর্তীতে, ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, তিনি ভারতে পালিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করেছি, যাতে তারা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি, আমাদের কাছে শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপুল পরিমাণ প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা শেখ হাসিনার শাসনামলের কর্মকাণ্ডের একটি শক্তিশালী সাক্ষ্যপ্রমাণ। এর বাইরেও, তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে, যা যথাযথ সময়ে প্রকাশ করা হবে।