মাঠে থেকেই নির্বাচন নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত বিএনপির

বিএনপি সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গড়িমসিসহ সব ধরনের ষড়যন্ত্র মাঠে থেকেই মোকাবিলা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটি মনে করছে, গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে, যা সরকারের একাধিক উপদেষ্টার মদদে হচ্ছে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, সরকার বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং একটি ইসলামী দল, তরুণদের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনকেই রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। ফলে তারা সহজে ক্ষমতা ছাড়বে বা নির্বাচন দেবে বলে মনে হয় না।

সরকারের ওপর চাপ তৈরির পরিকল্পনা

বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, একাধিক নেতা মত প্রকাশ করেন যে সরকার এখন এনজিওগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা-মহানগরে বিএনপির সমাবেশের মাধ্যমে অবস্থান জানান দেওয়া হয়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে। ঈদের পর নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনের দাবিতে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

বৈঠকে দাবি করা হয়, একটি বিশেষ গোষ্ঠী অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। এই গোষ্ঠীর লোকজন সরকারের ভেতরেও রয়েছে, যার ফলে সরকারপ্রধান প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারছেন না। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কিছু ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এমনকি জুলাই-আগস্টের হত্যা মামলার আসামি হয়েও অনেক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হচ্ছেন না এবং সচিবালয়ে বসেও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি ইসলামী দল ও একটি নতুন দলের নেতারা শেল্টার দিচ্ছেন এমন তথ্য তুলে ধরে বৈঠকে নেতারা বলেন, এর পেছনে ওই দল দুটোকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ তারা খোঁজ করে পেয়েছেন। এর ফলে ঘুস ও দুর্নীতি কমেনি; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলেও নেতারা মনে করেন। বৈঠকে বিএনপির নেতারা নিশ্চিত করেছেন যে এসব ষড়যন্ত্রের পরও সরকারের ওপর তাদের রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত থাকবে। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, যাদের মধ্যে ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *