বাদীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জুলাই শহীদ আফনানের পরিবার

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান (Sad Al Afnan)। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League) ও যুবলীগ (Jubo League) নেতা-কর্মীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

মায়ের দায়ের করা মামলা ও নিরাপত্তাহীনতা

১৪ আগস্ট রাতে নিহত আফনানের মা নাছিমা আক্তার (Nasima Akter) বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই নাছিমা আক্তার ও তার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (Jannatul Mawa) প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে গোপন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তারা দৃঢ়ভাবে আফনান হত্যার বিচার দাবি করছেন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাচ্ছেন।

ঘটনাস্থলে পরিদর্শন ও পারিবারিক দুর্দশা

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার আরমান মিঝি মসজিদসংলগ্ন আফনানের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়িতে তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানান, ভয়ের কারণে মা ও মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা গোপন আশ্রয়স্থল থেকে ফিরে আসেন এবং সহপাঠীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নাছিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“তিন মাস আগে আমার স্বামী সালেহ আহমদ (Saleh Ahmed) বিদেশে মারা গেছেন। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের আত্মীয়স্বজনদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা কার কাছে যাব?”

আফনানের বোন জান্নাতুল মাওয়া বলেন,
“বাবা ও ভাইকে হারিয়ে আমরা একেবারে একা হয়ে গেছি। এখন শুধু ভাই হত্যার ন্যায়বিচার চাই।”

সেদিনের ভয়াবহ ঘটনা

সহপাঠীরা জানান, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আফনান তার এক নারী সহপাঠীকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মাদাম ব্রিজ এলাকায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা তাকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আফনানের স্মরণে ‘আফনান চত্ত্বর’ করার দাবি

আন্দোলনকারীদের পক্ষে আরমান হোসেন (Arman Hossain) ও বায়েজীদ (Baizid) বলেন,
“আফনান অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। সেই সঙ্গে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী চত্বরে ‘আফনান চত্ত্বর’ নামে নামকরণের দাবি জানাই।”

পুলিশের বক্তব্য

লক্ষ্মীপুর সদর থানা (Lakshmipur Sadar Thana)-এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার (Yasin Faruk Mojumdar) জানান,
“আফনানের মা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে বাদীর পালিয়ে থাকার বা হুমকির বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *