সুযোগ পেলেই আমরা ড. ইউনূসকে শূলে চড়াই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৭ মাসে ২০০’র অধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সকল ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরি।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বশেষ ৬ মাসে দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ১৮.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি। দেশের রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
সারজিস আলম লিখেন, এই রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কাকে আশ্চর্যজনকভাবে হ্যান্ডেল করেছে ইন্টেরিম সরকার। হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা। দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে। ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের ওপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল৷ বাফুফের ওপর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে।
সারজিস আলম লিখেছেন, স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা।
তিনি লেখেন, সর্বশেষ জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গুতেরেসের সফর এই সরকারের ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিকগনিশন বাড়াবে৷ তাছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন আগামী বছর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের সঙ্গে ইফতার করতে চান! ভাবতে পারেন? অনেক কিছু বলা সহজ। গাইলানো সহজ৷ নির্বাচন দ্রুত চাওয়াও সহজ৷ হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বজভঙ্গ অর্থনীতিকে যে কারো জন্য এসে ঠিক করতে ঘাম ছুটে যেতো। পারতো কি না সেটা নিয়েও ঢের সন্দেহ আছে। উপরন্তু, অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখতে না পারলে ক্ষমতায় আসলেও যে টিকতে মুশকিল হবে, এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করেই জানে।
তিনি আরও লিখেন, ইউনূস সাহেব হয়তো হিমশিম খাচ্ছে অনেক কিছু করতে। ধ্বজভঙ্গ একটা দেশ আর ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক একটা জাতিকে ঠিক করতে। তারপরও অনেক কিছু করছে এবং করবে। প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আপনি যদি সম্মত না হতেন তাহলে দ্বিতীয় অন্য কোনো ব্যক্তিকে আমরা সেই জায়গায় তখন চিন্তা করতে পারিনি। আপনার সঙ্গে তুলনা তো নয়ই। বাংলাদেশ অবশ্যই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।