ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যের নিন্দা জানালো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) (Dhaka Metropolitan Police) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ([Sheikh Md. Sajjat Ali])-এর ‘ধর্ষণ’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ([Bangladesh Interim Government])। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ধর্ষণ হলো ধর্ষণ, তা ৮ বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রেই হোক বা ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধার ক্ষেত্রেই হোক। এত গুরুতর ও জঘন্য অপরাধকে তার যথাযথ নামেই ডাকতে হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের কোনো নাগরিকের প্রতি সহিংসতা বরদাশত করবে না এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য ও বিতর্ক
গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা নারী নির্যাতন বা নিপীড়ন বলবেন।”
ডিএমপি কমিশনারের এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। নাগরিক সমাজের অনেকে কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনসমূহ। যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান তুলে ধরে:
- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ([Transparency International Bangladesh (TIB)])
- সেভ দ্য চিলড্রেন ([Save the Children])
- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ([Ain o Salish Kendra (ASK)])
- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ([Manusher Jonno Foundation])
- ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ([Breaking the Silence])
তাদের বক্তব্য, ধর্ষণকে ধর্ষণ বলেই উল্লেখ করতে হবে। শব্দ পরিবর্তন করে অপরাধের ভয়াবহতা লঘু করার সুযোগ নেই। সঠিক ভাষা ব্যবহার না করলে আইন প্রয়োগ দুর্বল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ([Shaheen Anam]) বলেন, “যে অপরাধ এতটা ভয়ংকর, সেটির নাম পরিবর্তন করলে কী লাভ? এটি অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টামাত্র।”
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স বিভাগের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ([Abdullah Al Mamun]) বলেন, “নারী নির্যাতন একটি বিস্তৃত বিষয়। তার মধ্যে ধর্ষণ অন্যতম জঘন্য অপরাধ। সব অপরাধকে যদি সাধারণীকরণ করা হয়, তাহলে যথাযথ আইন প্রয়োগ সম্ভব হবে না।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রকৃত স্বরূপ আড়াল করার চেষ্টা করলে বিচারব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নারী অধিকারকর্মীদের বক্তব্য, অপরাধকে স্বীকার না করে শব্দ পরিবর্তনের চেষ্টা আসলে দায় এড়ানোর অপচেষ্টা।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এই বিতর্কের মধ্যেই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া এল। এখন দেখার বিষয়, কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন কি না এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।