‘হাসিনাবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে জানলেও হস্তক্ষেপ করতে পারেনি ভারত’

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের আগে দেশটিতে হাসিনাবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে ভারত অবগত ছিল, তবে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S. Jaishankar)।

ভারত জানলেও হস্তক্ষেপ করেনি

শনিবার (২২ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে ভারত অবগত থাকলেও শেখ হাসিনার ওপর তাদের প্রভাব সীমিত ছিল। ফলে তারা কেবল পরামর্শ দিতে পারত, সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ ছিল না।

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদের পরামর্শক কমিটির এক বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের প্রয়োজনীয় প্রভাবের অভাব ছিল, তাই আমরা কিছু করতে পারিনি।”

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিল। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক (Volker Türk) এর সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন। তুর্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে বলেছিলেন, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হতে পারে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও কূটনৈতিক আলোচনা

পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় পরামর্শক কমিটির বৈঠকে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় দেওয়ায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী (Vikram Misri) বাংলাদেশ সফর করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বিমসটেক সম্মেলনে বৈঠকের সম্ভাবনা

আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস (Muhammad Yunus) এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

চীন সফরের প্রস্তুতি

ড. মুহাম্মদ ইউনুস ইতিমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং বর্তমানে তিনি চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই সফরে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে চীনের বিভিন্ন শহরের মধ্যে বিমান সংযোগ বৃদ্ধি-সহ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি: চীন প্রতিপক্ষ নয়, প্রতিযোগী

জয়শঙ্কর বৈঠকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন প্রতিপক্ষ নয়, তবে প্রতিযোগী। ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে কৌশলগতভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *