বঙ্গভবনে ইমামতি করায় আলোচনায় সেনাপ্রধান, সমালোচনার জবাবে মুখ খুললেন সহকর্মী সাবেক সেনা কর্মকর্তা

বঙ্গভবন (Bangabhaban)-এ আয়োজিত প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar-uz-Zaman) মাগরিবের নামাজে ইমামতি করেন। এরপর তার নামাজ পড়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি প্রশংসা ও সমালোচনার মুখে পড়েন।

সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা ও তির্যক মন্তব্য

অনেক নেটিজেন তার এই ইমামতিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও, কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন সেনাপ্রধান কীভাবে ইমামতি করলেন, কিংবা তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে নামাজ পড়া শুরু করলেন কি না। এই সমালোচনার জবাবে মুখ খুলেছেন তার বন্ধু, সহকর্মী এবং বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল (Bangladesh Defence Journal)-এর সম্পাদক আবু রুশদ মো. শহিদুল ইসলাম (Abu Rushd Md Shahidul Islam)।

মিলিটারি একাডেমির স্মৃতিচারণ

নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া স্ট্যাটাসে শহিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘ওয়াকার যৌবনের ধারালো সময়েও ইমামতি করতেন।’’ তিনি জানান, ১৯৮৪-৮৫ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (Bangladesh Military Academy)-তে তারা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং একই রুমে থেকেছেন। ওয়াকার নিয়মিত নামাজ পড়তেন, কাজা নামাজও আদায় করতেন।

স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘প্রচণ্ড শীতের রাতে কাদামাখা শরীর নিয়ে রুমে ফেরার পর যেখানে সবাই বিশ্রামে যেতো, সেখানে ওয়াকার গোসল করে ওজু করে নামাজ আদায় করতেন। তিনি শুধু নামাজ পড়তেন না, ইমামতিও করতেন।’’

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রশংসা

আবু রুশদ আরও লেখেন, জেনারেল ওয়াকার একজন অত্যন্ত নরম মনের মানুষ ছিলেন এবং তার ভাষায় ‘স্ল্যাং’ পর্যন্ত ব্যবহার করতেন না, যা মিলিটারি প্রশিক্ষণের সাধারণ দৃশ্যের বিপরীত।

তিনি বলেন, ‘‘নবী-রাসুল ছাড়া কেউই ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নন, জেনারেল ওয়াকারও না। কিন্তু ব্যক্তি ওয়াকার যদি ইমামতি করেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’

রাজনৈতিক মন্তব্য ও কড়া জবাব

তিনি সমালোচকদের উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘‘সব কিছুতেই রাজনীতি খোঁজা অভব্যের দল! অনেকে এখন নিজেদের ‘স্ট্র্যাটেজিক এক্সপার্ট’ মনে করে, যেন তারা খালেদা জিয়ার চেয়েও বড় রাজনীতিবিদ!’’

আবু রুশদ জানান, তিনি সেনাপ্রধান হওয়ার পর ওয়াকারের কাছে কোনো ব্যক্তিগত তদবির করেননি এবং এ নিয়ে কোনো সময় পাবলিক মন্তব্যও করেননি।

সমালোচনার ভাষা নিয়ে উদ্বেগ

স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি বলেন, ‘‘সমালোচনার অধিকার সবার আছে, কিন্তু সেটা শালীন ও সভ্যভাবে হওয়া উচিত। এখনকার সমালোচনায় শালীনতার চরম অভাব দেখা যাচ্ছে। জেনারেল ওয়াকার নামাজ পড়েন, সেটা তার ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় বিষয়, যা নিয়ে অসভ্য মন্তব্য অনুচিত।’’

তিনি বলেন, ‘‘নামাজ, রোজা, হজ এগুলো সম্পূর্ণ আল্লাহর সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। কারো ধর্মীয় চর্চাকে রাজনীতির চোখে দেখা খুবই দুঃখজনক।’’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *