ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে দেশে খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (Human Rights Culture Foundation – MSF) প্রকাশিত মার্চ মাসের প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৩২টি, যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি (৫৭টি)। দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৭টি, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ২৫টি। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনাও বেড়েছে—ফেব্রুয়ারিতে ১৯টি থাকলেও মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ৬১টিতে।
এমএসএফের মতে, দেশে কঠোর আইন থাকলেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা ও হতাহতের চিত্র
মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫২টি ঘটনার মধ্যে ৪৫৯ জন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজন এখনো গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির, তিনজন আওয়ামী লীগের, একজন পথচারী, একজন বৃদ্ধ এবং একজন প্রবাসী রয়েছেন।
সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ৩৯টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ৬টি, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ৩টি, বিএনপি-জামায়াত ইসলামী ঐক্যজোটের মধ্যে ১টি, বিএনপি-এলডিপির মধ্যে ১টি, বিএনপি-জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে ১টি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ১টি ঘটনা ঘটেছে।
গণপিটুনির ঘটনা বৃদ্ধি
মার্চ মাসে অন্তত ৩৯টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৭ জন ডাকাত সন্দেহে, ২ জন সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জন রাজনৈতিক কারণে, ১ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জন অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এবং ১ জন ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এমএসএফ বলছে, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বশীল ও শিথিলতার কারণে এসব অপরাধের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে , যা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।