বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উদ্বেগ
প্রতিবেশী দেশ ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া বিতর্কিত ‘মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধন) বিল-২০২৪’ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি (BNP)। দলটির দাবি, এই আইন ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
রোববার (০৬ এপ্রিল) বিকেলে গুলশান (Gulshan) এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) এসব কথা জানান।
ওয়াকফের মূল চেতনার পরিপন্থী নতুন আইন
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মতো সংগঠনগুলোর মতে নতুন আইনটি ইসলামি ওয়াকফ ব্যবস্থার মূল চেতনার পরিপন্থি। এসব সংগঠন মনে করে, ওয়াকফ বোর্ডের পরিচালনা মুসলমানদের দ্বারাই হওয়া উচিত এবং এতে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল।
তিনি জানান, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ইসলামি দানের প্রাচীন ব্যবস্থা ‘ওয়াকফ’ নিয়ে নতুন আইনে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা সরাসরি মুসলিমদের অধিকার খর্ব করে। এটি মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির সমালোচনা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভারতে জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলমান রয়েছে। তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার এবং সাংস্কৃতিক স্বার্থবিরোধী এই আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এতে ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনায় চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ভারতে ওয়াকফ বোর্ডগুলোর অধীনে প্রায় ১০ লাখ একর সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলোর বড় অংশ ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে। নতুন আইনে পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিধানটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার হ্রাস করতে পারে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর হুমকি
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই আইন মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হানতে পারে। তিনি মনে করেন, এমন পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, ভারতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বোর্ড বা আইনগত সংগঠনে বিপরীত ধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় না, তাই এই আইনকে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আইনটি শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ জমির ওপর গড়ে ওঠা মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন (BNP) এর উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালও উপস্থিত ছিলেন।