বাংলাদেশের পদক্ষেপে উত্তপ্ত ভারতের পূর্ব সীমান্ত: মংলা বন্দরে চীন, লালমনিরহাটে পাকিস্তানি আগ্রহ

ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও পাকিস্তানের উপস্থিতি ভারতের সীমানার নিকটবর্তী স্থানে বাংলাদেশের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে।

সীমান্তে পাকিস্তানিদের আনাগোনা ও চীনের প্রভাব

পত্রিকাটি দাবি করেছে, পাকিস্তানি সামরিক সদস্যদের বাংলাদেশ এমন স্থানে নিয়ে এসেছে যা কলকাতা থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার এবং হাসিমারা বিমানঘাঁটি (Hasimara Airbase) থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। হাসিমারা ঘাঁটিটি ভারতের কৌশলগত ‘চিকেনস নেক’-এর নিকটবর্তী, যা সিকিম (Sikkim), ভুটান ও তিব্বতের সীমানার ত্রিমুখী এলাকায় অবস্থিত।

একইসঙ্গে, খুলনা বিভাগের মোংলা বন্দর (Mongla Port) চীনের সহযোগিতায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস (Dr. Muhammad Yunus)-এর সাম্প্রতিক বেইজিং (Beijing) সফরের ফলাফল, যেখানে তিনি প্রায় ৪০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন।

ভারতীয় অবস্থানের প্রতি চ্যালেঞ্জ

মোংলা বন্দর ঘিরে বাংলাদেশ ও চীনের একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বন্দরের সম্প্রসারণের ঘোষণা এসেছে, যা ভারতের আগের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সুবিধাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এক কৌশলগত বিশ্লেষক বলেন, “চীন এখন কলকাতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে”।

লালমনিরহাটে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ

২৭ মার্চ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (Bangladesh Air Force) একটি নির্দেশনায় জানায়, তাদের পাঁচজন সিনিয়র কর্মকর্তা পাকিস্তানে JF-17 যুদ্ধবিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন। চীন-পাকিস্তান যৌথভাবে তৈরি এ যুদ্ধবিমানগুলো রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট বিমানবন্দর (Lalmonirhat Airport)-এ মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে, যা হাসিমারা বিমানঘাঁটি থেকে মাত্র ১২০ কিমি দূরে।

ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ভারতের কাছে ‘চিকেনস নেক’ বরাবর চীনের অবস্থান আগে থেকেই উদ্বেগের বিষয় ছিল। এখন সেই উদ্বেগ দক্ষিণে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আরও বিস্তৃত হচ্ছে। আর পাকিস্তানি সামরিক উপস্থিতি সরাসরি সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থান নেবে — এমন পরিস্থিতি ভারতের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে, ড. ইউনুস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মধ্যে ব্যাংককে বিমসটেক (BIMSTEC) সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ ঘিরে কূটনৈতিক মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এক ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “ড. ইউনুস ভারতের উদ্বেগ পাশ কাটিয়ে চীনের পক্ষে ঝুঁকেছেন, অথচ আমরা তাকে প্রচারের সুযোগ দিয়েছি”।

চীনের সঙ্গে ঢাকার যৌথ ঘোষণায় চট্টগ্রামে ৩৫ কোটি ডলারের শিল্পাঞ্চল স্থাপন, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা এবং সমুদ্র নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার অঙ্গীকারও ছিল।

পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ইঙ্গিত

সূত্র মতে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এপ্রিলের শেষ দিকে ঢাকা (Dhaka) সফর করবেন, এছাড়াও বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। ড. ইউনুস ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ইসলামাবাদ সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাংলাদেশি বিশ্লেষকের পাল্টা মত

তবে এক বাংলাদেশি কৌশল বিশ্লেষক বলেন, নয়াদিল্লি ঠিক কাজ করেছে ইউনুসের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন এবং ইউনুসের মনোভাব সরাসরি উপলব্ধির সুযোগও পেয়েছেন।

তবে ড. ইউনুসের মিডিয়া টিম এই সাক্ষাৎকারকে উপস্থাপন করছে যেন ভারত তার কাছে মাথা নত করেছে এবং পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) অভিযোগ স্বীকার করেছে, এমন প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *