পূর্বাচল প্লট কেলেঙ্কারি: দুর্নীতির অভিযোগে চার্জশিট
রাজধানীর পূর্বাচল (Purbachal) নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul) সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শেখ হাসিনার প্রভাব ব্যবহার করে প্লট বরাদ্দ
তদন্তে উঠে আসে, পুতুল কোনও আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। যদিও পুতুল ও তার পরিবারের নামে রাজধানীতে অন্যান্য আবাসন সুবিধা থাকলেও, তা গোপন রেখে আইন, নীতিমালা ও নিয়ম ভেঙে এই বরাদ্দ নেন। পরে সেই প্লট নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করেন।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব ও সহযোগিতায় পুতুলকে প্লট বরাদ্দ দেন।
মামলার তদন্ত ও চার্জশিট
দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission – ACC) এর সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এই মামলার তদন্ত করেন এবং ১২ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন। ১০ মার্চ তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়, যাতে ১৮ জন আসামি এবং ১৬ জন সাক্ষীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ, সব আসামিই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া এবং সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করা হয়েছে। মামলার শুনানি হবে ১০ এপ্রিল, ঢাকা মহানগর আদালতে।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও ভূমিকা
-
**সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul) অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার জাতীয় কমিটির চেয়ারপার্সন। তিনি নিজ ও পরিবারের আবাসন সুবিধা গোপন করে মায়ের প্রভাব ব্যবহার করে প্লট বরাদ্দ নেন।
-
শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina): প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অপব্যবহার করে মেয়ের পক্ষে বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দ দেন, যা দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (Allotment of Land) আইনের লঙ্ঘন।
-
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (Mohammad Salah Uddin): প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১। তিনি পুতুলের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাবে পরস্পর যোগসাজশে নথি গায়েব করেন।
-
শরীফ আহমেদ (Sharif Ahmed): সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ দেন।
-
পুরবী গোলদার, কাজী ওয়াছি উদ্দিন, মো. শহীদ উল্লা খন্দকার: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থেকেও অসৎ উদ্দেশ্যে বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন।
-
রাজউক (RAJUK) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যরা (আনিছুর রহমান মিঞা, খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী) বেআইনিভাবে সভায় বরাদ্দ অনুমোদন করেন।
আরও পাঁচ মামলা, অভিযুক্ত শেখ রেহানার পরিবারও
এই প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত অভিযোগে জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এতে অভিযুক্ত হয়েছেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, এসব মামলার চার্জশিটও যথাক্রমে ১০, ১৩ ও ১৫ এপ্রিল আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
বিচারের পরবর্তী ধাপ
পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট গ্রহণের পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবেন। পরবর্তীতে গ্রেফতার না হলে সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।