নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বিএনপি

সরকারের অবস্থান জানতে মুখিয়ে বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয় বলে মনে করছে বিএনপি (BNP)। দলটির অভিমত, দিন যত যাচ্ছে ততই নির্বাচন ঘিরে অস্পষ্টতা বাড়ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের রূপরেখা এবং সময়সূচি জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায় দলটি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছে বিএনপি

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সূত্রটি আরও জানায়, সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময় পাওয়া গেলে একটি প্রতিনিধিদল উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবে। যদিও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) বর্তমানে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন এবং ১৬ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সাক্ষাৎ আদৌ এ সপ্তাহে হবে কিনা, তা অনিশ্চিত।

সাক্ষাতের উদ্দেশ্য: নির্দিষ্ট সময় জানতে চায় বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ (Salah Uddin Ahmed) বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি। তিনি কখন সময় দেন, তার ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু। আমরা চাই মহাসচিবকে নিয়েই দেখা করতে।”

বিএনপির নেতাদের মতে, এবারকার সাক্ষাৎ কিছুটা ব্যতিক্রম। দলটি প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি জানাতে চায় যে, তারা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায় এবং এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান জানতে চায়। বিশেষভাবে, কবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে—সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় দলটি।

অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের মনোভাব জানতে চায় বিএনপি

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেন, “দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এত আন্দোলন করেছি, অনেক নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে এবং আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপি নির্বাচন চেয়ে আসছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো নির্বাচনের আগে সংস্কার সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে, যা কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

নির্বাচন নিয়ে ইউনূসের মন্তব্যে অস্পষ্টতা দেখছে বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’-এ একমত হয়, তাহলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর যদি বৃহৎ সংস্কারে সম্মতি হয়, তাহলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনে হবে। বিএনপি এই বক্তব্যকে অস্পষ্ট বলেই দেখছে।

বিএনপির নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে এই অস্পষ্টতা দূর করতে চান। সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন যে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। আমরা চাই উনি নির্বাচন সংক্রান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা দিন। আমরা জানতে চাই তিনি ছোট সংস্কার ও বড় সংস্কার বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন।”

এপ্রিল মাস পর্যবেক্ষণে বিএনপি, পরবর্তীতে আন্দোলনের প্রস্তুতি

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখায় কি না, সেটা বুঝতে চলতি এপ্রিল মাস পর্যবেক্ষণে রাখবে বিএনপি। যদি তেমন কিছু না হয়, তাহলে ‘ভোটাধিকার’ ইস্যুতে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে সক্রিয় করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু (Abdul Awal Mintoo) বলেন, “বিএনপি ১৫ বছর ধরে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছে। যদি যথাসময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ না পাওয়া যায়, তাহলে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *