কে এই আশিক চৌধুরী? তাকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাসের আদৌও কি কোনো কারণ আছে?

আশিক চৌধুরী (Ashique Chowdhury), জন্মনাম চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, একজন বাংলাদেশী ব্যাংকার যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (Bangladesh Investment Development Authority) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (Bangladesh Economic Zones Authority)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একইসাথে একজন শৌখিন স্কাইডাইভার।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করলেও, আশিকের শৈশব কেটেছে যশোরে, তার বাবার পোস্টিং-এর কারণে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ ও ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ (Dhaka Residential Model College)-এ পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (IBA) থেকে স্নাতক এবং লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি একজন চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট।

পেশাগত জীবন

আশিক ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে আঞ্চলিক অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং ও লেন্ডিং স্ট্র্যাটেজি বিভাগে কাজ করেন। তিনি ‘দ্য বেঞ্চ’ নামে বাংলাদেশের প্রথম স্পোর্টস বার সহ-প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১২ সালে লন্ডনে আমেরিকান এয়ারলাইন্সে যোগ দেন এবং ২০১৯ সালে ইউরোপ ও এশিয়ার ফাইন্যান্স প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এ ভিজিটিং প্রফেসর এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এইচএসবিসি (HSBC) বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুরেও তিনি কাজ করেছেন।

২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং-এ অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে লোকমান হোসেন মিয়া (Lokman Hossain Miah)-র স্থলাভিষিক্ত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং মো. সরোয়ার বারী (Md. Sarwar Bari)-র স্থলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিল তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করা হয়।

স্কাইডাইভিং ও ব্যক্তিগত সাফল্য

আশিক চৌধুরী একজন আগ্রহী স্কাইডাইভার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে স্কাইডাইভ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস (Guinness World Records)-এ নাম লেখান। এই কৃতিত্বে তাকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি স্পন্সর করে। এছাড়া তার একটি প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স রয়েছে।

পারিবারিক জীবন

তিনি নাবিলার সাথে বিবাহিত, যিনি আইবিএ থেকে স্নাতক। তাদের একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে।


সমালোচনার চোখে: আশিক চৌধুরী কি আদৌ ‘সঠিক পছন্দ’?

যদিও অনেকে তাকে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে নিযুক্ত হওয়াকে সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, সমালোচকেরা মনে করছেন এই উচ্ছ্বাসে বাস্তব মূল্যায়নের অভাব রয়েছে।

১. গড়পড়তা প্রোফাইল, ব্যতিক্রমী কিছু নেই

তার কর্মজীবন কর্পোরেট রুটেই সীমাবদ্ধ। বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন বা বাস্তবায়নে তার কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান এখনো দেখা যায়নি।

২. পাবলিক সার্ভিস অভিজ্ঞতা নেই

BIDA-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারণী সংস্থায় কাজ করতে হলে সরকারী প্রশাসন ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সম্পর্কে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, যা তার ক্যারিয়ারে অনুপস্থিত।

৩. দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোক্তা অভিজ্ঞতা নেই

তিনি ‘দ্য বেঞ্চ’ নামক একটি স্পোর্টস বার সহ-প্রতিষ্ঠা করলেও বৃহৎ পরিসরের উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে তার সরাসরি জড়িত থাকার কোনো নজির নেই।

৪. রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন

একইসঙ্গে দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া — এসব নিয়োগের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থন কাজ করেছে বলেই অনেকেই মনে করছেন। অভিজ্ঞতা ও অবদানের দিক থেকে এর ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


আশিক চৌধুরী একজন প্রফেশনাল হলেও তাকে ঘিরে যেভাবে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, বাস্তব মূল্যায়নের ভিত্তিতে সেটি যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। তার নেতৃত্বে কার্যকরী কোন পরিবর্তন আসবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *