বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে জোর সমালোচনার মুখে রয়েছে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এর শাসনকাল। অভিযোগ উঠেছে, তার আমলে ভোটকে কার্যত ‘নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে, এবং এই নির্বাসিত অবস্থাকে দীর্ঘায়িত করতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে বর্তমান শাসকদের একটি ঘনিষ্ঠ মহল।
তরুণ প্রজন্মের ভোটবিমুখতা ও রাজনৈতিক হতাশা
বর্তমান ২৫ বছরের কম বয়সী তরুণরা নিজেদের জীবনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেনি। তাদের কাছে “ভোট” মানে একপ্রকার জবরদস্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। একটি অংশ ভোটাধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেও অধিকাংশ তরুণ নির্বাচনে আগ্রহী নয়, কারণ তারা অতীতে আওয়ামী লীগ (Awami League) এর কর্মকাণ্ডের প্রভাবাধীন ছিলো। এই শ্রেণির তরুণদের হাতে স্মার্টফোন থাকলেও, তারা দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা
রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) ও এনসিপি (NCP) উল্লেখযোগ্য। যদিও বাস্তবে তাদের মাঠ পর্যায়ের প্রভাব সীমিত, তবুও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। হাজার হাজার ভুয়া আইডির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচন ঠেকিয়ে ক্ষমতায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।
নির্বাচন ঠেকিয়ে ক্ষমতায় থাকার ভয়ংকর খেলা
বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচন ঘিরেই ঘটেছে বড় বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। যেমন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের এরশাদ পতন, কিংবা ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত সরকারের উত্থান—সবই কেন্দ্র করে ছিল নির্বাচন। একইভাবে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় পতন এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়া। কিন্তু নব্য ফ্যাসিস্টরা এই সংস্কার আটকে দিতে চায়। তারা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে যে, নির্বাচন ছাড়া কোন গণতন্ত্র টিকতে পারে না।
‘জনগণের’ দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রবিরোধী চক্রান্ত
যারা জনগণের নামে নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তারা আসলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। জামায়াত-এনসিপির মত দলগুলো দেশের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের সমর্থন পায়। এদের হাতে যদি দেশের গণতন্ত্র আটকায়, তবে তা হবে ভয়াবহ পরিণতির সূচনা।
নির্বাচনের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদ নির্মূল সম্ভব
একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব। জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া দরকার। তার বাইরে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা প্রকৃত বাংলাদেশি নয়, বরং ভারত কিংবা পাকিস্তানের সমর্থক। এইসব মিত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে জনগণ রাজপথে দাঁড়িয়ে কঠোর জবাব দেবে।
*মির্জা ইয়াসিন আলী’র (সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল) পোস্ট থেকে সংকলিত