নববর্ষের ফ্যাসিষ্টের মোটিফে আগুন দেওয়া কে এই রবিউল, যা জানা গেল তার সম্পর্কে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতিমূলক শিল্পকর্মে আগুন দেওয়ার ঘটনায় যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি কি সত্যিই আরবি বিভাগের সেই পরিচিত মুখ, রবিউল ইসলাম রাকিব? ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। প্রশ্ন উঠেছে—এই রবিউলই কি সেই রবিউল, যিনি আগে ছাত্ররাজনীতিতে সরব ছিলেন, আবার এখন আগুন সন্ত্রাসের পেছনে?


চোখে চশমা, লম্বা চুল, আর কালো গেঞ্জি—পরিচিত সেই ছায়া

ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাবির বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে আলোচনার ঝড় ওঠে। এক সহপাঠীর ভাষ্যে, ‘চোখে চশমা, লম্বা চুল আর কালো গেঞ্জি—দেখেই আমরা বুঝে ফেলি কে সে। আমাদের ক্লাসের সবাই তাকে চিনে ফেলেছে, একদম খালি চোখেই।’ সন্দেহভাজন ছাত্রটি আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রাকিব, যিনি থাকতেন মাস্টারদা সূর্যসেন হলে।

তাকে নিয়ে ছাত্রদের ভাষ্য আরও পরিষ্কার—এই রবিউল ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার নাম নতুন নয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের ঘটনার পর থেকেই হলে আর দেখা যায়নি তাকে।


ছাত্ররাজনীতি থেকে আগুনের নেপথ্যে?

রবিউলের এক সহপাঠী নাসির বলেন, ‘সে ভোরবেলায় একাত্তর হলের সামনে এসে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়েছিল কিছুদিন আগেই। পরে সেটা নিজের টাইমলাইনে প্রকাশও করে। কিন্তু এই ঘটনার পরই সে ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করেছে।’

নাসির আরও বলেন, ‘সে গত জুলাইয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময়ও সক্রিয় ছিল। এরপর থেকেই আমরা তাকে বয়কট করেছি। বিভাগ ও হল—দুটো জায়গা থেকেই তাকে বয়কট করা হয়েছে। এখন সে ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না।’

এই ভাষ্যগুলো মিলিয়ে দেখা যায়, রবিউল শুধুই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী নন; বরং বিতর্কিত অতীতের ধারক একজন তরুণ, যার নাম বহুবার এসেছে সংঘর্ষ আর রাজনীতির প্রেক্ষাপটে।


প্রশাসনের অবস্থান: নিশ্চিত না হলেও সন্দেহ জোরালো

ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদেরও মনে হয়েছে ওই ছেলে হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এখন তদন্ত চলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল বলেন, ‘ছবিটা আমাদের হাতে এসেছে, আমরা চেষ্টা করছি তা ভেরিফাই করতে। যদিও আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, তবুও ছবি দেখে বিভাগে আলোচনা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে এমন অনেককে আমরা গত জুলাইয়ে দেখেছি, যাদের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়ে কল্পনাও করা যেত না। তাই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’


ছাত্রসমাজে প্রতিক্রিয়া: সন্দেহ নয়, নিশ্চিত দাবি

আরবি বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করছেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত যে ব্যক্তি ভিডিওতে ধরা পড়েছেন, তিনি রবিউলই। তাদের মতে, পরিচিত হাবভাব, পরিধান ও পূর্বের রাজনৈতিক অবস্থান সব মিলিয়ে তার জড়িত থাকার বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার। অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, এবং বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সময় নিচ্ছে।

ঢাবির বুকে এমন একটি দিনে, যেখানে বাঙালিয়ানার শিকড়ের উচ্ছ্বাস থাকে সর্বোচ্চ শিখরে, সেখানে এমন আগুনে স্পর্শে যেন পুরো আয়োজনটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এবং সেই প্রশ্নের কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি নাম—রবিউল ইসলাম রাকিব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *