নির্বাচনের আগে ‘সংস্কার’ চাই—এই দাবিকে সামনে রেখে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ কর্মসূচি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘোষণা এসেছে একটি মানববন্ধনের, যেখানে দাবি তোলা হয়েছে অধ্যাপক ড. ইউনূস (Dr. Yunus) কে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বহাল রাখার। যদিও কর্মসূচিটি ‘ছাত্রজনতা’র ব্যানারে ঘোষণা করা হয়েছে, বিশ্লেষকরা বলছেন—এটা মূলত একটি সুযোগসন্ধানী মহলের রাজনৈতিক প্রকল্প, যা গণতন্ত্রের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
পেছনের উদ্দেশ্য ও রাজনৈতিক প্রভাব
এই কর্মসূচির মূল স্লোগান—‘সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে’—শুধু একটি দাবিই নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। যার মাধ্যমে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করে একটি অনির্বাচিত, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার ছক আঁকা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একজন ‘অকাউন্টেবল না থাকা’ উপদেষ্টাকে দীর্ঘদিন ধরে বহাল রাখার এই প্রস্তাব গণতান্ত্রিক ধারার জন্য একটি বিপজ্জনক নজির।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ব্যানার ও ক্যাপশন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সেখানে এক ধরনের নাটকীয় আবেগ তৈরি করা হচ্ছে—‘আমার ভাই মরলো কেন’, ‘বুক পেতে মরে যাওয়া’ জাতীয় স্লোগানে আড়ালে এক নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর ছায়া। “ডক্টর ইউনূস বহাল থাকুক—এইটাই চাই”—এই একমুখী বার্তাগুলি প্রশ্ন তোলে, আদৌ কি এটি জনতার স্বতঃস্ফূর্ত চাওয়া, নাকি সুপরিকল্পিত প্রচারাভিযান?
এই কর্মসূচিতে স্পষ্ট রাজনৈতিক পক্ষপাত আছে, যেখানে মূল উদ্দেশ্য একটি নির্বাচিত সরকারের পথ বন্ধ করে একটি ‘প্রটেক্টেড রুলিং স্ট্রাকচার’ গঠন। এটি বাংলাদেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে উপেক্ষা করে সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি বৈধতা দেওয়া মানেই হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি গভীর সংকটের দ্বার উন্মোচন করা। এই ধরনের উদ্যোগের ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষয়প্রাপ্ত হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে এবং ভবিষ্যতে আরও অনিশ্চিত পরিস্থিতির জন্ম হতে পারে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন নজির অতীতে দেখেছে বিশ্ব, যেখানে অনির্বাচিত সরকারের দীর্ঘায়িত বৈধতা সঙ্কট, জনআন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ যেন সেই একই পথে না হাঁটে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
গণতন্ত্র মানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। অথচ ‘মার্চ ফর ইউনূস’—এর আড়ালে যে পরিকল্পনা চলছে, তা সরাসরি এ সকল মূলনীতিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে শুধু একটি নির্বাচনের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক চেতনারও অপমৃত্যু ঘটবে।