সংস্কার শেষ করে চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন চায় ইসলামী সমমনা দলগুলো

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনগণের প্রত্যাশার প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলেছে চারটি ইসলামী সমমনা দল। দলগুলো এক যৌথ বৈঠকে নির্বাচনসহ নয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে।

বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish), খেলাফত মজলিস (Khelafat Majlish), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (Jamiat Ulema-e-Islam Bangladesh), ও নেজামে ইসলাম পার্টি (Nezame Islam Party)। বৈঠকে তারা ৯ দফা দাবি ও সুপারিশে একমত হন। এসব দাবির মূলসুর হলো—প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কারের পর চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন।

এই নয় দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে—সংবিধানে “মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” পুনঃস্থাপন, বহুত্ববাদের সংযোজন না করা, সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমানো, শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, এবং গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমাজকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা।

এছাড়া, ভারতে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি সংশোধনী বিল বাতিলের দাবিও তারা তোলে। ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর এবং বিগত ১৫ বছরের গুম-খুনের বিচার, এবং আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর প্রত্যাহারও দাবি করা হয়েছে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে দলটি ও তার কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর সময়ের মতো জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh) তাদের অবস্থান খানিকটা আলাদা রেখেছে। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, “নির্বাচনই একমাত্র সমাধান নয়। দেশের মানুষ যেনো প্রশ্নবিদ্ধহীন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে সেটাই বড় কথা। এখনকার প্রশাসন দিয়ে হলে সেটা হবে খুনাখুনির নির্বাচন।”

তিনি আরো বলেন, “যেদিন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে, সেদিনই নির্বাচন দেওয়া হোক। সেটি কাল হলে কাল, ডিসেম্বর হলে ডিসেম্বর।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমান প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব থাকলে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবে না, এবং দেশ ফের দখলবাজ, চাঁদাবাজদের হাতে চলে যাবে।

প্রসঙ্গত, একই সময় বিএনপির মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলে। পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান রমজানের আগেই নির্বাচন চেয়ে বক্তব্য দেন।

বুধবারের সমমনা দলগুলোর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মহাসচিব ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *