রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Primeasia University) ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া এ মর্মান্তিক ঘটনায় নড়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সামাজিক মাধ্যম।
ময়মনসিংহের বাসিন্দা পারভেজ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী—এই দাবি করছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। সংগঠনটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রবিবার (২০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়া পল্টন (Naya Paltan) এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবে।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার রাত ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বহু ছাত্রদলকর্মী অংশ নেন। পরে সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে শেষবারের মতো পারভেজের মুখ দেখেন। মর্গে সেই মুহূর্তটি ছিল শোক এবং ক্ষোভে ভারী।
ঘটনার বিবরণে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল সারোয়ার জানান, ঘটনার সময় পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স (University of Scholars)-এর দুই ছাত্রী, যারা প্রাইমএশিয়ার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ওই দুই ছাত্রীর উপস্থিতি ঘিরে কোনো হাস্যরসের জেরে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এরপরই প্রাইমএশিয়ার ইংরেজি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী পারভেজকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার বুকে ছুরিকাঘাত করে। নিহতের বুকে ‘স্টেপ’ জাতীয় অস্ত্রের গভীর ক্ষত পাওয়া গেছে। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি বলেও জানান ওসি রাসেল।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা তথ্য ও প্রতিবাদ। একাধিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের দাবি, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিত মুখ সোবাহান নিয়াজ তুষার (Sobahan Niaz Tushar) এবং হৃদয় মিয়াজী (Hridoy Miazi)। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে বলা হচ্ছে, তারা দুইজনই ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে ছাত্রলীগ পূর্ণবাসনে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
এ ধরনের দ্বিমুখী রাজনীতি এবং সহিংসতা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। অনেকেই বলছেন, পারভেজ ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন কি না—এই প্রশ্ন না তুলে, আসল বিষয় হলো একটি তরতাজা প্রাণের নির্মম মৃত্যু।
যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সময়মতো এসব মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নেয়, তবে সামনে আরও পারভেজদের রক্তে শিক্ষাঙ্গন ভেসে যেতে পারে—এমন আশঙ্কাও ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষামহলে।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার না হলে তা আরও বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। রাজনীতির নামে সহিংসতা যেন ছাত্র রাজনীতির নিয়মিত অংশ হয়ে উঠছে—এমন বাস্তবতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।