প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খুন: তিনজন গ্রেফতার, তদন্তে উঠে আসছে সংঘর্ষের পেছনের গল্প

রাজধানীর বনানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Prime Asia University) ক্যাম্পাসে ছাত্রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নামে এক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। পরে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন—আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯), ও আল আমিন সানি (১৯)। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার গণমাধ্যমকে জানান, তদন্তের ভিত্তিতে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের আটকের প্রক্রিয়া চলমান।

নিহত জাহিদুলের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি ক্যাম্পাসের পাশের গলিতে চা খেতে গেলে সেখানে তিনজন ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে যে ইভটিজিং হয়েছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই পক্ষকে বসিয়ে মীমাংসা করলেও, পরে সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব ও আবুজর গিফারী—হাজারীপাড়া এলাকার কিছু যুবককে নিয়ে এসে জাহিদুলের ওপর হামলা চালান। তিনি দৌড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের দিকে যাওয়ার সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ঘটনার পর জাহিদুলের ভাই হুমায়ুন কবির বনানী থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে, যাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া এসেছে। ছাত্রদল (Chhatra Dal) সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের পাঁচজন সদস্য এ ঘটনায় জড়িত। তবে এ অভিযোগ এখনো প্রমাণ হয়নি, এবং তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে।

এই ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতার যে প্রবণতা আবারও সামনে এসেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *